হারানো পুঁজি ফিরে পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

গত বছর জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর যেভাবে শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক একইভাবে এবারের বাজেট প্রস্তাবের পরও শেয়ার বাজার চাঙা হয়ে উঠছে। প্রায় প্রতিদিনই সূচকের উত্থানের পাশাপাশি বাড়ছে লেনদেন। সেই সঙ্গে হারানো পুঁজি ফিরে পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারকে নিয়ে এবার ‘নেগেটিভ’ কিছু রাখা হয়নি। এছাড়া বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। এর বাইরে বস্ত্র খাতে ১ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি প্রকৌশল, সিমেন্ট এবং চামড়া খাতের বেশ কিছু কোম্পানিকে কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যার প্রভাবে বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পাচ্ছেন। আর তাতে বাজার মূলধনের দিক থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) রেকর্ড করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূলধন এখন ৫ লাখ ৯ হাজার ৯৩৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা বাজার মূলধনের দিক দিয়ে পুঁজিবাজার অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘করোনাকালের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নতুন করে নেগেটিভ কিছু আরোপ করা হয়নি। এটাই বাজারের জন্য পজিটিভ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া প্রস্তাবিত  বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর ২৫ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করা হয়েছে, যা পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত পজিটিভ বিষয়। এতে কোম্পানিগুলো আগামীতে আরও ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে।’

এদিকে উত্থানের মধ্য দিয়ে আরও একটি (৬ থেকে ১০ জুন) সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাংক-বিমা কোম্পানির পাশাপাশি বস্ত্র, মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারের দাম বেড়েছে বাজেট পরবর্তী প্রথম সপ্তাহে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন নতুন করে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। ফলে টানা পাঁচ সপ্তাহ বাজার মূলধন বাড়লো।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বলছে, গেলো সপ্তাহে প্রধান শেয়ার বাজার ডিএসই'র বাজার মূলধন ৯৯০ কোটি টাকা বেড়েছে। এতে লকডাউনের ৯ সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ৯৯০ কোটি টাকা।

আগের আট সপ্তাহেও বড় অঙ্কের মূলধন বাড়ে বাজারটিতে। ওই আট সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন বাড়ে ৪৯ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। এই হিসাবে লকডাউনের ৯ সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন বাড়লো ৫০ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৩ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা দশমিক ২২ শতাংশ। আগের আট সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৭৯৮ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। অর্থাৎ টানা ৯ সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বাড়ল ৮১১ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট। গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গেলো সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ১ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৩ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৩ শতাংশ।

অপরদিকে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকটি বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৮ দশমিক ১৬ পয়েন্ট।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বেড়েছে ২১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪২টির, ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪৩৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ২ হাজার ৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৮৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ১০ হাজার ২৫৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৯২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৫২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৩ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৭৮ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৩৪ টাকা।