এবার বিমা কোম্পানিকে শেয়ার বাজারে আনার চেষ্টা

ব্যাংকগুলো যাতে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বাড়ায় সেজন্য নানামুখী তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি এবার বিমা কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে গত সপ্তাহে বিমা কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এদিকে বিএসইসির এই প্রচেষ্টার সুফল পেতে শুরু করেছে শেয়ার বাজার। তথ্য বলছে, বিএসইসির এই প্রচেষ্টার ফলে গত সপ্তাহে দেশের শেয়ার বাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। এ সময়ে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। বাজার মূলধনের পাশাপাশি এই সময়ে বেড়েছে সবক’টি মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও।

বিমা কোম্পানিকে বিএসইসির চিঠি

অ-তালিকাভুক্ত ২৬ বিমা কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) জন্য ফাইল দাখিল ও ইক্যুইটির ২০ শতাংশ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) আইডিআরএ চেয়ারম্যান বরাবর এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চিঠিতে সই করেন। যদিও এর আগে অ-তালিকাভুক্ত ২৬ বিমা কোম্পানিকে শেয়ার বাজারে আনতে বিএসইসি বিভিন্ন ইস্যুতে ছাড় দিয়েছে।  এ নিয়ে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি গেজেটও প্রকাশ করা হয়। এরপরও কোম্পানিগুলো শেয়ার বাজারে আসতে ফাইল জমা এবং ইক্যুইটির ২০ শতাংশ বিনিয়োগে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিমা কোম্পানিগুলোকে শেয়ার বাজারে আনতে আইপিও’র জন্য ফাইল জমা ও ইক্যুইটির ২০ শতাংশ বিনিয়োগে পদক্ষেপ নিতে বিএসইসির পক্ষ থেকে আইডিআরএকে অনুরোধ করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এই বাজারে তাদের অংশগ্রহণ প্রায় ৮০ শতাংশ। শেয়ার বাজারের উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা বেশি হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে বিমা কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে।

এর আগে গত ২৩ মার্চ ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করে শেয়ার বাজারে ফ্রেশ ফান্ড (নতুন অর্থ) বিনিয়োগের জন্য দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয় বিএসইসি।

ওই চিঠিতে দেশের শেয়ার বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো উচিত।

জানা গেছে, বিমা কোম্পানির লাইসেন্সের শর্ত হিসেবে ব্যবসা কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশ্য শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হতে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা মূলধন থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমানে অ-তালিকাভুক্ত ২৬ বিমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, অ-তালিকাভুক্ত ২৬ বিমা কোম্পানি শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে মূলধনের অন্তত ২০ শতাংশ বাধ্যতামূলক বিনিয়োগের শর্ত রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনও কোম্পানিই আইপিওতে আসার কোনও উদ্যোগ নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে বা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে কেউ কাউকে বাধ্য করতে পারে না।’

শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের এ বাজারে কাউকে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগের শর্ত দেওয়া ঠিক নয়। এখানে বিনিয়োগে লোকসান হলে তার দায় কে নেবে?’

বুধবার (৩০ মার্চ) বিনিয়োগ বাড়াতে মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকার ডিলার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএসইসি। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) সভাপতি ড. হাসান ইমাম, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান, ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও ও ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড থেকে ১০০ কোটি টাকা আইসিবির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

মূলধন বেড়েছে হাজার কোটি টাকা

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। যদিও আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছিল ২ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭০টির। আর ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এর ফলে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১২ দশমিক ৭২ পয়েন্ট। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ৭ দশমিক ২৬ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৮ দশমিক ২৫ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহে বেড়েছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও। গত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ১১ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ২ দশমিক ৫০ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৩৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৭৮০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৫৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ৯০১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।