পুঁজিবাজারে কালো টাকার সুযোগ চান বিনিয়োগকারীরা

বাজেট উপস্থাপনের পর থেকে ভালো যাচ্ছে না শেয়ার বাজার। কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া না হলে এই বাজারের উন্নতির নাও হতে পারে। এমনটি মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ার বাজারের জন্য কালো টাকার ঘোষণা না থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ভর করেছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। পুঁজি বাজারের সুবিধাভোগীদের বেশিরভাগের মত হলো— শেয়ার বাজার চাঙা করতে হলে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা এই বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। সরকারের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমও মনে করেন, অর্থনীতির মূলধারায় আনতে কালো টাকাকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য।

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ‘প্রস্তাবিত বাজেট ও শেয়ার বাজারে তার প্রভাব’ নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার পুঁজিবাজারের উন্নয়নে খুবই আন্তরিক।’

সভায় মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান ৫ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ার বাজারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, কালো টাকার সুযোগ দেওয়া হলে তাতে একদিকে কালো টাকা অর্থনীতির মূলধারায় আসবে, অপরদিকে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে সহায়তা করবে।

সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর থেকেই টানা দরপতন চলছে (১৬ জুন ছাড়া) শেয়ার বাজারে। অনেকেই বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ার বাজারের জন্য তেমন কোনও ঘোষণা না থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ভর করেছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। বাজেট-পরবর্তী তিন কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৯ পয়েন্ট কমে যায়। অবশ্য বাজেট ঘোষণার পর শেয়ার বাজারে টানা যে দরপতন শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন)। এদিন সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে।

জাতীয় সংসদে গত ৯ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার কমানো ছাড়া আর তেমন কোনও সুবিধা দেওয়া হয়নি। আবার করপোরেট কর কমানোর ক্ষেত্রে যেসব শর্ত  জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে করপোরেট কর কমানোর সুবিধা পাবে না শেয়ার বাজারের অধিকাংশ কোম্পানি।

এদিকে নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রস্তাবিত বাজেটের পরের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই পতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ার বাজার। এতে গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি কমেছে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৯ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে গেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়লেও বিপরীতে দাম কমেছে ২৫১টির। আর ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে গত সপ্তাহে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স কমেছে ৫৪ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ২৮ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ২১৩ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট। অবশ্য তার আগে টানা চার সপ্তাহের পতনে সূচকটি কমেছিল ৪২৩ পয়েন্ট।

বাজারের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ২৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৩ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। এছাড়া ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও গত সপ্তাহে কমেছে। গত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ১০ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট।

বাজারের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৬০ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৮৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৩৪১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৪১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩৬ কোটি ৯ লাখ ১৯ হাজার টাকার, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বেক্সিমকোর শেয়ার। লেনদেন হয়েছে ২০৬ কোটি ৪৪০ লাখ ৭৮ হাজার টাকার।