ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ার বাজার, মূলধন বাড়লো ১৯ হাজার কোটি টাকা

আতঙ্ক, ভয় ও গুজব সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ার বাজার। বিনিয়োগকারীদের উৎসাহে এই বাজার গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিনই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় দেখা যায়। আর টানা চার সপ্তাহের এই ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক দিনের টানা উত্থানের পর গত সপ্তাহের প্রথম দুই দিন (রবিবার ও সোমবার ) কিছুটা সংশোধন হলেও পরের টানা ৩ দিন ঊর্ধ্বমুখী থাকে। অবশ্য গুজব ও মুনাফা তুলে নেওয়ার চাপে রবিবার ও সোমবার শেয়ার বাজারে সূচক কমে যায় বলে ধারণা করা হয়। এরমধ্যে রবিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছিল ১৯ পয়েন্ট। আর সোমবার কমেছিল প্রায় ৫৯ পয়েন্ট। 

উল্লেখ্য, গত রবিবার থেকে বাজারে গুজব ছিল, শেয়ারের দাম বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিল মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা। দুইয়ে মিলে তাই দুই দিন বাজারে দরপতন ঘটে। তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কোনও চিন্তাভাবনা এখনই বিএসইসির নেই। এরপর মঙ্গলবার সূচক ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে। এমনকি বুধবার ও বৃহস্পতিবারও ঊর্ধ্বমুখী থাকে।

বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিনই ঊর্ধ্বমুখিতার মাধ্যমে পার করেছে দেশের শেয়ার বাজার। এতে বেড়েছে সব কয়টি মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে টানা চার সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকলো শেয়ার বাজার। টানা চার সপ্তাহের এই ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। অবশ্য গত সপ্তাহজুড়ে শেয়ার বাজারে মূল্যসূচক বাড়লেও লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। অন্যদিকে বড় মূলধনের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। যে কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পরও গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন ৭৭৯ কোটি টাকা বেড়েছে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেলো সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৭৭৯ কোটি টাকা। আগের তিন সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ১৮ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে চার সপ্তাহের উত্থানে বাজার মূলধন বাড়লো ১৯ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন বাড়লেও গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬৫টির। আর ৫৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাজারের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছিল ১৫৩ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ১১৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ৯২ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।

এছাড়া বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছিল ৭০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৩৮ দশমিক ৩১ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ৪৭ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। তারও আগের সপ্তাহে বাড়ে ২৫ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট।

এদিকে বেড়েছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও। গত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ৩২ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৮ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ২৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট। তারও আগের সপ্তাহে বাড়ে ২০ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।

অবশ্য গত সপ্তাহে ডিএসইতে কমেছে লেনদেন। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ৯০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৮৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এদিকে, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৯১ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৯ হাজার ৫১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৪২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৬৩ কোটি ২০ লাখ ১ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ।