‘ভুল আসামি’ হয়ে কারাগারে থাকা আরমানের মামলার নথি তলব

আরমান (বাঁয়ে), পাশের ছবিতে স্বজনদের আহাজারি১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি শাহাবুদ্দিন বিহারী হিসেবে রাজধানীর পল্লবীর মো. আরমানকে তিন বছর ধরে কারাগারে বন্দি রাখায় সংশ্লিষ্ট মামলার (মাদকদ্রব্য আইনের মামলা) যাবতীয় নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ আদেশের অনুলিপি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা জজকে হাইকোর্টে নথি দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ‘ভুল আসামি’ হওয়া সত্ত্বেও আরমানকে আটক রাখা কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তাকে কেনো মুক্তি দেওয়া হবে না, তাকে হাইকোর্টে হাজির করার কেনো নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেনো নির্দেশ দেওয়া হবে না– তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, পুলিশের আইজি, ঢাকার পুলিশ সুপার, পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) সংশ্লিষ্টদের ১০ দিনের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এছাড়াও আগামী ৬ মে মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল আরমানকে কারাগারে বন্দি রাখা নিয়ে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। 

প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০০৫ সালের ৩০ আগস্ট গভীর রাতে পল্লবীর ৬ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৮ নম্বর লেনের ৭ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ শাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

‘এ সময় শাহাবুদ্দিন ছাড়াও গ্রেফতার হয় তার দুই সহযোগী সোহেল মোল্লা ও মামুন ওরফে সাগর। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে পল্লবী থানায় মামলা করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

‘এরপর এ মামলায় দু’বছর জেল খেটে জামিন পান শাহাবুদ্দিন। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্বাক্ষরযুক্ত জামিননামার মাধ্যমে জামিন নেন তিনি। কিন্তু পরে আর আইনের মুখোমুখি না হয়ে ফেরারি হয়ে যান শাহাবুদ্দিন।

‘সবশেষে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর শাহাবুদ্দিন ও তার দুই সহযোগীর প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেন ঢাকার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে পলাতক শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

‘এরপর ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সকালে পল্লবী এলাকায় অভিযান চালায় পল্লবী থানা পুলিশ। এ সময় পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান বাসায় নাশতা সেরে পাশের একটি চায়ের দোকানে যান। সেখান থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।

‘গ্রেফতারের পর থানার এক পুলিশ সদস্য গোপনে আরমানের মাকে জানান, আরমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং তাকে একটি মাদক মামলায় সাজা পরোয়ানাভুক্ত আসামি হিসেবে আদালতে সোপর্দ করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পরে আরমানের মা ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে আরমানকে মেঝেতে মুমুর্ষূ অবস্থায় দেখতে পান। এরপর অসুস্থ অবস্থাতেই আরমানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (বকশীবাজার) নেওয়া হয়। পরে তাকে স্থানান্তর করা হয় কাশিমপুর কারাগারে। বর্তমানে আরমান কাশিমপুর কারাগারেই আছেন।’

আরমানের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের ভুলে অথবা গোপন কারসাজিতে শুধু পিতার নামে (মৃত ইয়াসিন) মিল থাকায় মৃত ইয়াসিন ওরফে মহিউদ্দিনের ছেলে শাহাবুদ্দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ তিন বছর ধরে ‘নির্দোষ’ আরমান (৩৬) সাজা ভোগ করছেন। অন্যদিকে প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন আরমানের বন্দিত্ব নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য তার পরিবারকে লাগাতার চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।

আরমানের স্ত্রীর বরাতে পত্রিকার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শাহাবুদ্দিন তার ছোট স্ত্রী চান্দাকে নিয়ে কাশিমপুর-২ নম্বর কারাগারে আরমানের সঙ্গে দেখা করেন এবং হুমকি দিয়ে বলেন, ‘মামলা নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না করো না। বাড়াবাড়ি করলে ডিবি, থানা-পুলিশ, উকিল সব কিন্তু ফাঁসবে। তারা ফাঁসলে তোমাকে ছাড়বে না। আমার মামলায় তুমি জেল খাটছো, তাই আমিই তোমাকে বের করবো। তোমার মাকে বলো, তোমার উকিলের কাছ থেকে যেনো লিখিত নিয়ে আসে যে আমি এই মামলা আর পরিচালনা করবো না। তোমাকে ছাড়াতে যা যা করার লাগে সব করবো। আর বাড়াবাড়ি করলে পুলিশ সবার মাজায় রশি  দিয়ে সব ধরে আনবে। তখন কিন্তু আমারে কিছু কইতে পারবা না।’ 

 

 

 

আরও পড়ুন: ‘ভুল আসামি’ আরমানের মুক্তি চেয়ে করা রিটের শুনানি মঙ্গলবার