একটি মগ, ভালোবাসা ও বাংলা ট্রিবিউন

এক সময় কোথাও লেখা প্রকাশের সুযোগ পেলে বর্তে যেতাম। তখন ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে পাওয়ার আনন্দই ছিল আলাদা। প্রায় দুই দশক ধরে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখে, নিজের নাম দেখতে দেখতে সেই মোহ ঘুচে গেছে! জীবনের এই পর্বে এসে কেউ যদি লিখতে বলে, লেখা চায়, তাহলে কিছুটা ‘সম্মানিত’ বোধ করি বটে, কিন্তু সহজেই রাজি হই না। পত্রিকার মান-মর্যাদা, কমিটমেন্ট, যিনি লেখা চাইছেন, তার সঙ্গে সম্পর্কও দেখি। কিছু ‘সম্মানী’ পাওয়া যাবে কিনা সেটাও দেখি!
একদিন আকস্মিকই বাংলা ট্রিবিউনে লেখার প্রস্তাব পাই। এর আগেই জেনেছিলাম, আমার স্নেহভাজন বেশ কয়েকজন এই অনলাইনে কাজ শুরু করেছেন। মূলত তাদের প্রতি ভালোবাসা আর আস্থা থেকেই এখানে লেখালেখি শুরু করি।
এ গণমাধ্যমটি খুব অল্প দিনের মধ্যে মন জয় করে নেয়। আমাদের কালচারে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় খুব একটা অভ্যস্ত নই। একবার কোনও কিছুর একটা ফরম্যাট দাঁড়িয়ে গেলে বছরের পর বছর সেই ফরম্যাটে চালিয়ে দেই। আমাদের দেশের মিডিয়া এর বাইরে খুব একটা যেতে পেরেছে বলে মনে হয় না। আমি বলব, এ ক্ষেত্রে বাংলা ট্রিবিউন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। পাঠকদের আকৃষ্ট করতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আইটেম পাওয়া যায় এখানে। কিন্তু তা কখনও রুচি ও শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করে না। পুরো নিউজ পেপারটিতে একটা দায়বদ্ধতার ছাপ আছে। ভুল নিউজ প্রকাশ করে তা গোপনে সরিয়ে নেওয়া, ক্ষমা চাওয়া, ভুল তথ্য দেওয়া, নানা ধরনের আজগুবি খবর প্রকাশ, পাঠক আকৃষ্ট করার জন্য নোংরা পথ অনুসরণ থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছে বাংলা ট্রিবিউন। কোনও বিশেষ দল ও মতের প্রতি পক্ষপাত না দেখিয়ে অসা¤প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পক্ষে বাংলা ট্রিবিউনের বলিষ্ঠ ভ‚মিকা রীতি মতো দৃষ্টান্ত হওয়ার যোগ্য বলে আমার মনে হয়। পাঠক হিসেবে বলতে পারি, বাংলা ট্রিবিউন এখনও হতাশ করেনি। এমনকি লেখক হিসেবেও নয়। কয়েকটা লেখা প্রকাশের পরই তারা সম্মানীর একটা খাম পাঠিয়ে দেয়। লেখা প্রকাশের এত অল্প সময়ের মধ্যে সম্মানি পেয়ে আমি তো অবাক! লেখালেখির অভিজ্ঞতা তো একেবারে কম হলো না। সেই ১৯৯৭ সাল থেকে বিভিন্ন স্বল্পখ্যাত, বিখ্যাত দৈনিক, সাপ্তাহিক থেকে শুরু করে একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিরামহীন লিখে চলেছি। কিন্তু সম্মানী পাওয়ার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। যারা সম্মানী দেন তাদের মধ্যেও আবার ‘কিন্তু’ আছে। লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর কখনও ছয়মাস, কখনও এক বছর পর্যন্তও অপেক্ষায় থাকতে হয়। এ অনেকটা সেই তালগাছের চারা রোপণের মতো। ছেলেমেয়ে বড় হয়, বিয়ে করে নাতি-নাতনি হয়, তবু গাছে তাল আর ধরে না!

আরও পড়তে পারেন: অনলাইন সাংবাদিকতায় নতুন যুগের সূচনা করেছে বাংলা ট্রিবিউন
এখানেও ব্যতিক্রম বাংলা ট্রিবিউন। নিয়মিত লেখক সম্মানী দেওয়া হয়। লেখার সম্মানী পাওয়া লেখকের অধিকার আর লেখককে সম্মানী দেওয়া প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য- এটা তারা মানেন। তবে শুধু ‘সম্মানী’ নয়, লেখকদের এখানে যথেষ্ট ‘সম্মান’ও দেওয়া হয়। বাসায় সম্মানী পৌঁছে দেওয়া, লেখকদের নিয়ে চা-চক্র, পিঠা উৎসবের আয়োজন তো সম্মান দেওয়াই বটে! পিঠা উৎসবে বাংলা ট্রিবিউনের লোগো সংবলিত একটি মগ উপহার দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা এই চমৎকার মগটিতে চা খাই, আর অনলাইনটির প্রতি ভালোবাসাও যেন একটু একটু করে বাড়ে! তবে এই ভালো ও ভালোবাসাই শেষ কথা নয়। বাংলা ট্রিবিউন আরও নতুন নতুন বিষয় পাঠকদের উপহার দিক, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সংখ্যা বাড়াক, সুদখোর-ঘুষখোর-কালোবাজারি-দুর্নীতিবাজ-ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাক, দুবছর পূর্তিতে এই প্রত্যাশা করি।
আরেকটি কথা, বাংলা ট্রিবিউনের মার্কেটিং পলিসি আরও উন্নত করা দরকার। ভালো জিনিস পাঠকরা অবশ্যই গ্রহণ করেন। কিন্তু এমন একটি ভালো জিনিস বাজারে আছে,  সেটা তো পাঠকদের জানাতে হবে!

লেখক: কলামিস্ট