এত যে নিউজ পোর্টাল আর তারা যে অজস্র নিউজ তৈরি করে ও সরবরাহ করে, সেসবের মধ্য দিয়েই একটার সঙ্গে আরেকটার মানের পার্থক্য হয়ে যায়। পাঠক নিজেদের রুচি ও স্বার্থমতো তার মানের বিচার করে। সারাবিশ্বে নিউজ পোর্টালের ক্ষেত্রে কতজন দেখছে, কতক্ষণ একটি পোর্টালে থাকছে এসব দিয়ে পোর্টালের উচ্চতা মাপা হয়। তার মানে ‘পপুলারিটি’ হলো রেটিংয়ের বিষয়। কিন্তু এই রিডারশিপ বা ভিউয়ারশিপ দিয়ে পত্রিকাটি কতটা মানসম্পন্ন তা নির্ধারণ করা যায় না।
নিউজ পোর্টালগুলো পাঠকের সুবিধার দোহাই দিয়ে বা পাঠকের ‘চাহিদা’ পূরণ করতে গিয়ে ক্রিটিক্যাল সংবাদের দিক থেকে সরতে শুরু করেছে। সেটাও বোধ হয় কেবল বাংলাদেশের পরিস্থিতি নয়। এই যে পোর্টাল বাড়তে থাকা আর ক্রিটিক্যাল সংবাদ কমতে থাকা, এর পরিণতি কী হবে!
তথ্যবিভ্রাট একটা পরিণতি। তথ্য যাচাইয়ের কোনও সুযোগ বা আগ্রহ নেই। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের চরিত্রটা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। আবার প্রোপাগান্ডাও নিউজে পরিণত হচ্ছে। সেটার একটা বিপদ যে, পাঠক নিউজ আর প্রোপাগান্ডা পার্থক্য করার অভ্যাসটা নষ্ট করে ফেলতে পারেন।
আবার বিপরীতে, এতগুলো পোর্টাল এবং নানাবিধ সাংবাদিকতার একটা সুবিধাও রয়েছে। গুরুত্ব পেত না এমন অনেক বিষয়ই হয়তো এখন কোনো না কোনো প্রতিবেদকের নজরে এলো এবং তিনি তার যাতায়াত আছে এমন একটা পোর্টালে সেই খবরটা দিলেন। নতুন এই ব্যবস্থায় একজন সাধারণ মানুষ একজন পোর্টাল পরিচালকের সহায়তায় একটা ‘সাধারণ’ উপেক্ষিত বিষয়কেও নিউজের মর্যাদা দিতে পারছেন। যারা নেট ব্রাউজ করেন তারা হয়তো ঘুরতে ঘুরতেই খবরটার সন্ধান পেলেন। এভাবে কেবল উপেক্ষিত প্রসঙ্গই গুরুত্ব পেল তা নয়, খবরের নিয়মিত পাঠক নন, এমন লোকও পাঠক হয়ে পড়ছেন।
তারপরও ‘জনস্বার্থের’ বিষয়টা চলে আসে। যে পরিণতিটা দেখতে পাই তা হলো জনমানুষের সংবাদ কমে যাচ্ছে দিন দিন। শ্রমিক বা গরিব, সাঁওতাল বা বস্তিবাসী। একসময় বস্তিতে আগুন বা উচ্ছেদের খবর ন্যাশনাল নিউজ হতো। এখনও হয়তো একটু-আধটু বা কোনো কোনো পত্রিকায় হয়।
কিন্তু মোটের ওপর এসব নিউজের গুরুত্ব হারিয়েছে। আর এসব পরিস্থিতির মধ্যে দু’জন মানুষের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও রেষারেষির খবরও লিড নিউজ হয়ে যায়। এই বদল ‘জনস্বার্থ’ রক্ষা করে না। তাহলে পত্রিকাগুলোর অন্তত সে বিষয়ে লোক দেখানো বুলি বন্ধ করা উচিত যে তারা ‘জনস্বার্থে’র পক্ষে।
লেখক : হেড অব মার্কেটিং, বাংলা ট্রিবিউন ও বিশিষ্ট অভিনেত্রী