পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সঙ্গে অবিশ্বাস্যভাবে বিস্ময়কর মিল দেখা গেলো বাংলাদেশের তিনবারের একজন প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বেগম খালেদা জিয়া। ‘পানামা পেপারস’-এর তালিকায় নওয়াজ শরীফের মতো খালেদা জিয়ার পরিবারের নাম প্রকাশিত হয়েছে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার প্রধান হিসেবে।
নয় বছর নানা কৌশলে আইনের বিভিন্ন ফাঁকফোকরে পা রেখে বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলা থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা তো হলো না। এই বিচারের একটি সারমর্ম তুলে ধরা যায় এভাবে–যা থেকে মোটামুটি ধারণা করা যাবে মামলাটিতে হয়রানি করা হয়েছিল আসলে কাকে? খালেদ জিয়াকে, নাকি সরকারকে?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই মামলটি করা হয় দ্রুত বিচার আইনে। নিষ্পত্তি হওয়ারও কথা ছিল ৬০ কর্মদিবসের মধ্যেই। কিন্তু মামলাটির রায় আসতে সময় লেগেছে দশ বছর,৬০ কর্মদিবসের পরিবর্তে ২৬১ কর্মদিবস। ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে–অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের চাইতে ২০১ দিন সময় বেশি লেগেছিল মামলাটি বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি করতে। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এই বিচারিক আদালতের বাইরেও ১৩ বার উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, শুরুতেই চ্যালেঞ্জ করেছেন মামলার যৌক্তিকতা নিয়ে এবং মামলা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
কিন্তু তাতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। বিএনপির আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে ধরনা দিয়ে বলেছেন বিচারক বদলাতে হবে, কারণ বিচারকের প্রতি তারা আস্থা রাখতে পারছেন না। তাদের আবদারের প্রেক্ষিতে তিন-তিনবার বিচারক বদলাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অতিষ্ঠ হয়ে উচ্চ আদালত চতুর্থবারের মতো আর বিচারক বদলে সায় দেননি। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সেখানেই থেমে থাকেননি, বিচারিক প্রক্রিয়া দীর্ঘ আর জটিল করার জন্য ১৫৫ বার সময় প্রার্থনা করেছেন এবং প্রতিবারই সেই প্রার্থনা গ্রহণ করে সময় দেওয়া হয়েছে। এখানেই প্রশ্নটি এভাবে আসে যে আসলে হয়রানির শিকার কে? খালেদা জিয়া নাকি বিচার বিভাগ? দেখা যাচ্ছে সবকিছুতেই তাঁদের অনাস্থা। বিচার বিভাগ, সরকার, এমনকি বিচারকরাও তাঁদের রোষাগ্নি থেকে ছাড় পেলেন না। কিন্তু তারপরেও তো রায় হলোই এবং অভিযুক্তরা আসামিতে পরিণতও হলেন। যারা পলাতক, আইনের হাত নিশ্চয় একদিন তাদেরকেও টেনে আনবে এজলাসে কিংবা কারাপ্রকোষ্ঠে।
দুই.
দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার তো শাস্তি হলো। কিন্তু তারপর? একটি বিষয়ে প্রচার বেশ জোরেশোরে চালানো হচ্ছে যে কারাগারে যাওয়ার ফলে খালেদার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে যাবে। মানুষ সরকারকে শাপান্ত করবে এবং আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ঘটিয়ে ছাড়বে। আরও প্রচার করা হচ্ছে যে এই সরকার আন্দাজই করতে পারছে না যে দিন দিন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা কী পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কত কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে সরকারের খেয়াল নেই–দুর্নীতিবাজেরা বাংলাদেশ ব্যাংককেও দেউলিয়া বানিয়ে দিচ্ছে, তার দিকে নজর নেই। আর এই সামান্য দুই আড়াই কোটি টাকার জন্য তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে কিনা এভাবে হেনস্তা হতে হচ্ছে!
এখন প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, এই মোটাদাগের যুক্তি বাজারে চলছে কাদের মাধ্যমে এবং কারা এর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে অতি সহজেই? আমরা যদি খুব ভালো করে লক্ষ করি তা হলে দেখব, খালেদার কারাবাসের ব্যাপারে বিএনপির আইনজীবীরা যখন নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছেন তখন তাদের মন্ত্রণাদাতারা দুটি কৌশল অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে অবলম্বন করলেন–
১. বিচারিক প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব দীর্ঘায়িত করার জন্য টানা ২৮ দিন ধরে খালেদা জিয়া এবং তার আইনজীবীরা অনেক অসঙ্গতিপূর্ণ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করলেন এবং আরও সময় চাইলেন, যা শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বিচারককে ইতি টানতে হয়েছিল, আর তাতে বেশ ক্ষুব্ধও হয়েছিলেন বিএনপির নেতাদের একাংশ; এবং দুই. সোশ্যাল মিডিয়া এবং সর্বপ্রকার প্রচারমাধ্যমকে ব্যবহার করে এই কথাটাই ব্যাপকভাবে প্রচার করা হতে থাকল যে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বেগম জিয়াকে কারাগারে দিয়ে তার জনপ্রিয়তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিএনপি তাদের নেত্রীকে কারাগার থেকে মুক্ত করার জন্য তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং এজন্য শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিয়ে খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার নেতৃত্বে ‘দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক সরকার’ প্রতিষ্ঠা করবে।
অথচ সমগ্র দেশ জানে এটা কতখানি অসত্য ও মিথ্যাচারিতায় পরিপূর্ণ।
গালভরা স্লোগান-সর্বস্ব এই চটুল কথার ভেতর দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বের যে মাইন্ডসেট সঙ্গোপনে লুক্কায়িত তা হলো– ১. খালেদা জিয়া কারাগারেই থাকুন যতদিন পর্যন্ত নির্বাচন না হয়;
২. কতদিন পর্যন্ত খালেদা জিয়া কারাগারে থাকবেন? যতদিন পর্যন্ত তীব্র আন্দোলন গড়ে না উঠবে;
৩. বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেবে যে নির্বাচন হবে এমন একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে, যেখানে শেখ হাসিনার কোনও উপস্থিতিই থাকবে না;
৪. খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত হবে দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক সরকার–যাদের দুজনেই ইতোমধ্যে দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। কাজেই বিএনপির নেতৃত্বের সেই অংশ মোটামুটিভাবে নিশ্চিত হয়েছেন যে তাদের রাজনৈতিক দর্শনে খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার ভাবমূর্তি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে।
অর্থাৎ আপাতত খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় এবং তারেক জিয়া লন্ডনে অবস্থান করায় বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব এক ধরনের ভারমুক্ত–অন্তত যতক্ষণ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হয় কিংবা তারেক জিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তন না ঘটে। তাছাড়া একটা বিশাল অংশের ইচ্ছা নির্বাচনে অংশ নেওয়া, কিন্তু খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার উপস্থিতি সেসবে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করলে এমনটা অনুমান করা যেতেই পারে যে বিএনপির একটা বৃহৎ অংশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে উন্মুখ হয়ে আছে এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য খালেদা-তারেকের অনুপস্থিতি তাদের সবচাইতে বেশি আরাধ্য।
তিন.
ঘুরেফিরে সেই প্রসঙ্গটাই আসে। খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের ঘটনাটা কি তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিল? দুদিন আগে সেকান্দর নামের এক প্রবীণ গাড়িচালকের কাছ থেকে এক ভিন্ন প্রতিক্রিয়া পেলাম। তার কথা, ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা খাওয়ার কারণে শাস্তি পাইছে, সে জেলে গেছে বিচারের পর। কিন্তু সে জেলে নিয়া গেছে একটা মাইয়ারে। এই মাইয়া তো চুরি করে নাই, তার শাস্তি হইল ক্যান? তাইলে তারে কেন জেল খাটতে হইব?’ আমি বললাম যে সে তো জেল খাটছে না, তার ম্যাডামের সাহায্যের জন্য সঙ্গে থাকবে। কিন্তু সেকান্দার এই কথা মানতে নারাজ, ‘দ্যাশের আইন কী কয় হেইডা কন আগে। বেকসুর মাইয়াডারে থাকতে হইব জেলখানায়? হেয় তো আর ইচ্ছা করলেই যহন খুশি তহন যেহানে খুশি সেহানে যাইতে পারব না। তাইলে তারো তো জেলই হইয়া গেল!’
মানুষের প্রতিক্রিয়ার এটা একটা রূপ। আমাদের মিডিয়া জগতের একাংশ এমনকি বিদেশি গণমাধ্যমের বঙ্গীয় সংস্করণেও এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির দুটি আনসারি আছেন, তাদের কাজই হলো মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন মহলে প্রতিদিন গিয়ে নানারকম অপপ্রচার এবং ব্যাপক মিথ্যা তথ্য পেশ করা। ওরা এমন তথ্যও সেখানে পেশ করেছিলেন–যার সারমর্ম হলো, খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের প্রতিবাদে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে, পুলিশ বেপরোয়া গুলি ছুড়ছে এবং অনেক প্রতিবাদী মানুষ নিহত বা আহত হচ্ছে।
কিন্তু এই প্রচারণা কোনও অবস্থাতেই বিদেশি কূটনৈতিক মহলকে প্রভাবিত করতে পারেনি। আদালতের সিদ্ধান্ত সবসময়ই বিদেশিদের কাছে চূড়ান্ত সত্য বলে প্রতিভাত হয়ে থাকে। কাজেই জামায়াত-নিয়ন্ত্রিত বিএনপির এই প্রচারণা কোনোভাবেই হালে পানি পায়নি।
সর্বত্র এ ধরনের অলীক ও সর্বৈব মিথ্যাচার যখন ক্রমাগত প্রচার করা হতে থাকে গোয়েবলসীয় কায়দায়, তখন কেউ না কেউ ক্ষণকালের জন্য হলেও বিভ্রান্ত হতে পারেন। জামায়াত-নিয়ন্ত্রিত বিএনপি এখন এই কৌশলটিই প্রয়োগ করে চলেছে। অবাক ব্যাপার, এই গোয়েবলসীয় প্রচারণা এখন সোশ্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমের অন্তত শতকরা ৭০ ভাগ কুক্ষিগত করে রেখেছে। আর আওয়ামী লীগ একরকম প্রতিবাদ না করেই মাঠ ছেড়ে বসে আছে! ফলে গণমানুষের মধ্যে যে শতকরা ৪০ ভাগ লোক দলনিরপেক্ষ, তাদের ভেতরে যাতে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হতে পারে–তারই ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে। এই নষ্ট প্রচারণা একটা পর্যায়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রভাব ফেলবে, যদি সময় মতো এর পাল্টা ব্যবস্থা না নেওয়া যায়।
জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত বিএনপির প্রচারণা এবার অন্য যে কোনও সময়ের চাইতে তীব্র। তারা মরণপণ করে নেমেছে। একই সঙ্গে তাদের সাহায্যে নেমেছে তাদের আন্তর্জাতিক মিত্রসমূহ, যারা চায় একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে। তাই সর্বপ্রকার বশীকরণ মন্ত্র তারা প্রয়োগ করা শুরু করেছে। একটা ভয়াবহ বিষ তারা ছড়িয়ে দিয়েছে দেশব্যাপী। তারা জানে আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর মূলশক্তি গ্রামবাংলার তৃণমূল পর্যায়ে। তাই তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে চলেছে তৃণমূলের নেতৃত্বকে নানাভাবে দূষিত করার জন্য। এই দূষণ প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে তাদের উদ্যমী মনোভাবকে অবসাদগ্রস্ত করে ফেলবে, বিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং এক ধরনের পরাজিত মানসিকতা ও পলায়নপরতার জন্ম দেবে। লক্ষ্ করলে দেখা যাবে এই মানসিকতা সংক্রমিত হতে হতে নেতৃত্বের বিভিন্ন স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে।
প্রতিপক্ষের সবচাইতে বড় বিজয় হবে যদি সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে পরাজিতের মনোভাব তৈরি করে দিতে পারে। শঙ্কার ব্যাপার, এই প্রবণতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিদৃষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের ভেতরে এই ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার কতিপয় নমুনা এখানে তুলে ধরা হলো–
১. প্রশ্ন: দেশে তো অনেক কাজ হচ্ছে, অনেক উন্নতি হচ্ছে, তাই না?
উত্তর: কিসের উন্নতি? এ তো এমনিতেই হতো! মাঝখান থেকে সরকারের ভেতরে কিছু নব্যধনী তৈরি হয়েছে, যারা দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে ব্যাপক সম্পদ বানাচ্ছে;
২. প্রশ্ন: ইলেকশন তো আসছে, হবেটা কি শেষ পর্যন্ত?
উত্তর: কী আর হবে, বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে দিলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে।
প্রশ্ন: কেন?
উত্তর: কেন আবার, দলের মধ্যে এত টাকাপয়সার লেনদেন হচ্ছে যে সবার মন ভেঙে যাচ্ছে। দলের কোনও পদের জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, পুলিশের এসআই পোস্টিং থেকে শুরু করে মাস্টার কেরানি, স্কুল-কলেজে ভর্তি থেকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত সব জায়গায় খালি খাই খাই। আর এর বিরাট অংশ চলে যাচ্ছে রথী-মহারথীদের পকেটে। এতে তো কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। এতে ওদের কেউ হতাশ হয়ে ঘুরে মরছে ধান্দায় আর কেউবা হতাশ হয়ে বুঁদ হচ্ছে ইয়াবায়।
৩. প্রশ্ন: ভোট তো আসছে,কী মনে হয় হালচাল?
উত্তর: আমার এ নিয়ে কোনও আগ্রহ নেই। দেশে যদি ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে আমি সেখানেই ভোট দিতাম। কাউকেই পছন্দ হয় না আমার। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি কাউকেই নয়। জামায়াতকে তো নয়ই। কারো ভেতরে কোনও দেশপ্রেম আছে ভাই? নেই। সবারই শুধু মালপানির ধান্ধা, ক্ষমতা আর বড় বড় কথা। এক শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ আছে দেশের? ওই ভদ্রমহিলা একা আর কত সামাল দেবেন? তাঁর চারদিকে তো ঘিরে ধরে আছে নেকড়ে আর হায়েনার দল! তাঁকে কোনও মতে ফেলতে পারলে দেশের অবস্থা তো ভাই একাত্তরের চাইতেও ভয়াবহ হবে!
প্রিয় পাঠক, এই হচ্ছে এখনকার চিন্তাভাবনার মোটামুটি একটি ধারা। জামায়াত নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এদেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মনে যে এই ধারণার জন্ম দিতে পেরেছে–এটাই হচ্ছে তার বাস্তবচিত্র। প্রকৃতপক্ষে,বিশাল সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে শাসনদণ্ড হাতের মুঠোয় নিয়েও দলগতভাবে আওয়ামী লীগ যেন নির্বাচনের আগেই হেরে বসে আছে। আর নেতাহীন, সমন্বয়হীন, সংগঠনহীন নেতাসর্বস্ব দল বিএনপি বিচরণ করছে স্বপ্নের জগতে। এদেশের মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক শাস্তি নিশ্চিত করেছে স্বাধীনতা-সমর্থিত এই আওয়ামী লীগ সরকার। আর তাতে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে একাত্তরের সেই দেশদ্রোহীদের, যাদেরকে এদেশের শাসকের আসনে বসিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ইতিহাসকে লাঞ্ছিত করেছিল খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বিএনপি সরকার। আর তারা নাকি দেবে দুর্নীতিমুক্ত, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা? যদি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পতন নিশ্চিত করা যায়, তবে কি স্বাধীনতাবিরোধী সেই অপশক্তি সে দেশের অস্তিত্ব রাখবে–যে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তাদের নেতাদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে? প্রশ্নটি আপনাদের বিবেচনায় রইল।
চার.
ভারতে একজন দাউদ ইব্রাহিম আছে। তার কীর্তিকাহিনি, তার মাফিয়া-সুলভ কার্যক্রম, বিদেশে তার বিপুল বৈভব, তার নেটওয়ার্ক–সবই যেন রূপকথাকেও হার মানায়। আমরা অবশ্য তারেক জিয়া আর তার মা-ভাইদের পেয়েছি। তাদের একজন ফিলিপাইনের সাবেক ফার্স্টলেডি ইমেলদা মার্কোসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রচনা করেছেন সম্পদের পাহাড়, আর একজন মাফিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করে দেশটাকে জামায়াতের হাতে বন্ধক দেওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছিলেন। তারা দেশকে পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে এক নম্বর বানিয়ে, একুশে আগস্টের মতো ঘটনা ঘটিয়ে, বিপুল পরিমাণ আবিষ্কৃত-অনাবিষ্কৃত সমরাস্ত্র চোরাকারবার করে দাউদ ইব্রাহিমকেও পেছনে ফেলে দিয়েছেন।
দাউদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে তারেকের একাধিকবার সাক্ষাৎও হয়েছে। কে কাকে বস বলেছেন–তা জানার খুব ইচ্ছে।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক জাগরণ