আত্মীয়-স্বজন, আপনজন কিংবা কাছের ও পরিচিত কেউ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে, মানুষ কষ্টে ব্যথাতুর হয়। তাদের স্মরণ করে প্রতিনিয়ত স্মৃতিকাতর হয়। বেদনার পলেস্তারা জমাট বাঁধে হৃদয়-মনে। এ বেদনা প্রকাশের সাম্প্রতিক প্রবণতা হলো মৃত্যুর ৩/৪ দিন পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভালোবাসার মৃত মানুষটির একক কিংবা যৌথ ছবি প্রকাশ করে নানা আবেগপ্রবণ ও স্মৃতিচারণমূলক মন্তব্য পোস্ট করা। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও আড়ালে চলে যান ভালোবাসার মানুষটি। এরপর সাধারণত মৃত্যু দিবসে স্মরণ-শোকের মধ্যে আলোচিত হন তিনি। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের ভালোবাসার মানুষটি এমন এক জগতে প্রবেশ করেছেন যে, এ লৌকিকতা, বেদনা ও স্মৃতিকাতরতা তাঁর মঙ্গলের জন্য ইহজগতে কোনও উপকারে আসবে না, আর নতুন প্রবেশ করা পরলৌকিক জগতে কোনও কাজে আসবে না। তাহলে কি আমরা ভালোবাসার মানুষকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো না? অবশ্যই করবো। প্রশ্ন হলো আমরা কি তাঁর প্রতি ভালোবাসা এরমধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবো, না পরলৌকিক জীবনেও যাতে তিনি ভালো থাকেন, তাঁর অধিকতর কল্যাণ হয়, সে ভালোবাসায় তাঁকে সিক্ত করবো? কোরআন ও হাদিসে আখিরাতের জীবনের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা বড়ই ভয়ংকর। কিয়ামতের বিভীষিকাময় ময়দানে কেউ কারও হবে না। সবাই ইয়া নাফসি (আমাকে বাঁচান), ইয়া নাফসি করতে থাকবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “সেদিন মানুষ নিজের ভাই, নিজের মা, নিজের পিতা, নিজের স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে পালাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন সময় এসে পড়বে, সে নিজেকে ছাড়া আর কারও প্রতি লক্ষ করার মতো অবস্থা থাকবে না।” (সুরা আবাসা: ৩৪-৩৭) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি হাশরের মাঠে ভয়ে বলতে থাকবে- আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান। একমাত্র মুহাম্মদ (সা.) উম্মত নিয়ে চিন্তা করবেন।’ (বুখারি, ২৭১২) হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে সেদিন একমাত্র মুহাম্মদ (সা.) ছাড়া সকল মানুষ, এমনকি নবী-রাসুলগণও তাঁদের উম্মতদের ভুলে নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। হাশরের ময়দানের ভয়াবহ চিত্রের বর্ণনায় হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, ‘সেদিন সূর্যকে মানুষের অনেক কাছাকাছি করে দেওয়া হবে। ফলে তীব্র উত্তাপে সবাই ছটফট করতে থাকবে। প্রত্যেকেই ঘর্মাক্ত শরীরে দাঁড়িয়ে থাকবে। কেউ কেউ ঘামের নদীতে হাবুডুবু খেতে থাকবে। হজরত মিকদাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলকে (সা.) এ কথা বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টির অনেক নিকটবর্তী করে দেওয়া হবে। এমনকি মানুষের এক মাইলের কাছাকাছি উচ্চতায় নেমে আসবে। ফলে মানুষ তার তীব্র উত্তাপে আপন আপন আমল পরিমাণ ঘর্মাক্ত হবে। যার আমল যে পরিমাণ মন্দ হবে তার ঘাম সে পরিমাণ বেশি হবে। কারও ঘাম তাদের পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত হবে। কারও ঘাম তাদের হাঁটু পরিমাণ হবে। কারও ঘাম তাদের কোমর পরিমাণ হবে। কারও ঘাম তাদের মুখমণ্ডল পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। রাসুল (সা.) নিজের মুখের দিকে হাতের ইশারা করে বললেন, তাদের ঘাম এই পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।’ (বুখারি, ৬৫৩১; মুসলিম,৭২০৬) হাশরের ময়দানের কঠিন অবস্থার মধ্যেও সাত শ্রেণির মানুষ আল্লাহর আরশের ছায়াপ্রাপ্ত হবে। মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ সাত শ্রেণির মানুষকে হাশরের দিন তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। যে দিন তাঁর ছাড়া অন্য কোনও ছায়া থাকবে না। তাঁরা হলেন : ১. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, ২. ওই যুবক, যে নিজের যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত করেছে, ৩. ওই ব্যক্তি, যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যখন মসজিদ থেকে বের হয়, আর যতক্ষণ না আবার মসজিদে ফিরে আসে, ৪. আর ওই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসে, উভয়ে তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য একত্র হয় এবং তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য পৃথক হয়, ৫. আর যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে, আর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু বিসর্জন করে, ৬. ওই ব্যক্তি, যাকে কোনও সম্ভ্রান্ত ও সুন্দরী নারী কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য আহ্বান করে, আর তখন সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং ৭. ওই ব্যক্তি, যে দান করে সঙ্গোপনে, এমনকি তার বাঁ হাতও জানে না তার ডান হাত কী দান করে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আমাদের ভালোবাসায় প্রিয় মানুষটির বিদায়ের পর প্রায়ই বলে থাকি ওপারে ভালো থাকবেন। কোনও মানুষ মরে যাওয়ার পর নিজে থেকে আর কোনও কিছু করার শক্তি নেই তা তিনি যত বড় বুজুর্গই হন না কেন। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার আমল করার কোনও ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু এমন কিছু আমল রয়েছে যেগুলো দুনিয়ার জীবনে করলে মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তি কবরেও সে আমলের সওয়াব পেতে থাকেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমিই তো মৃতকে জীবিত করি, আর লিখে রাখি যা তারা অগ্রে প্রেরণ করে এবং যা পিছনে রেখে যায়। আর প্রতিটি বস্তুকেই আমি সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি।’ (সুরা ইয়াসিন: ১২) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন জ্ঞান যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, ৪৩১০) অভাবগ্রস্তদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া, খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা, সীমান্ত রক্ষা করা, প্রবাহিত পানির ব্যবস্থা করা, ওয়াকফ করা। এগুলোর সওয়াবের একটি অংশ সে পাবে। মসজিদ নির্মাণ করলে তার সওয়াবও পাবেন। উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ তৈরি করলো, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করবেন।’ (মুসলিম: ১২১৮) এমন ইলম (জ্ঞান) শিক্ষা দেওয়া যা মানুষের জন্য উপকারী এবং কল্যাণকর। যে ইলম মানুষকে হেদায়েতের দিকে নিয়ে যায়। মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয় এবং জান্নাতের পথে চলতে নির্দেশ করে। এ ধরনের ইলম শিক্ষা দেওয়ার কারণে মৃত ব্যক্তি কবরে এর সওয়াব পাবেন। গাছ লাগালে তার সওয়াব পাবেন। জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনও মুসলিম যদি কোনও বৃক্ষরোপণ করে, আর তা থেকে কোনও ফল কেউ খায় তবে সেটি তার জন্য সদকা, কোনও হিংস্র প্রাণী খেলেও তা তার জন্য সদকা, যদি কেউ চুরি করে খায় তাও তার জন্য সদকা, কোনও পাখিও যদি খায় তাও তার জন্য সেটি সদকা। এমনকি যদি কেউ তা কেটে ফেলে তাও সেটি তার জন্য সদকা।’ (মুসলিম, ৪০৫০) আল্লাহর পথে আহ্বানকারী ব্যক্তিও আহ্বানে সাড়া দিয়ে কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সওয়াব কবরে পেতে থাকবেন। অথচ তাদের সওয়াব থেকে কোনও কমতি হবে না। (মুসলিম: ৬৯৮০)
আমাদের উচিত হবে আমাদের প্রিয় এসব যে কাজ করে গিয়েছেন তা চালু রাখা। এছাড়াও আরও যা করতে পারি আমরা– এক. তাদের জন্য দোয়া-মাগফিরাত কামনা করলে মৃত ব্যক্তি কল্যাণ লাভ করবেন। এ ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে অনেক দলিল রয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেন, “তারা (মু’মিনগণ) বলেন: হে আমাদের পালনকর্তা আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্বে যারা ইমান এনেছে, তাদেরকে ক্ষমা করো। আর ইমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনও বিদ্বেষ রেখো না।” (সুরা হাশর: ১০) কোরআনের অন্য জায়গায় দোয়ার বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে, “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতামাতাকেও এবং যে ইমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও।” (সুরা নুহ, আয়াত: ২৮) পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া বর্ণিত হয়েছে, “হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতা ও সব ইমানদারকে ক্ষমা করুন।” (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১) দোয়ার কারণে আল্লাহ তা’য়ালা মৃতব্যক্তির তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে আমার রব, আমি তো এত মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল এলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, ৩৬) দুনিয়ায় যেমন মর্যাদায় তারতম্য থাকে, তেমনি পরকালেও প্রতিদানে তারতম্য থাকবে। জান্নাতের বিভিন্ন স্তর থাকবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতের ১০০ স্তর রয়েছে। প্রতি দুই স্তরের মধ্যে রয়েছে একশ’ বছরের ব্যবধান।’ (তিরমিযি, ২৫২৯) দুই. মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান করলে তার ছাওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছবে এবং তা দ্বারা তিনি উপকৃত হবেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই কোনও অছিয়ত করতে পারেননি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-ছাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে ছাদকা করলে তিনি কি এর ছাওয়াব পাবেন? রাসুল (সা.) বললেন- হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) সদাকার গুরুত্ব বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, “আর আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, তোমাদের কারও মৃত্যু আসার পূর্বে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরও কিছুকাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম। আর সৎকর্মপরায়ণ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।” (সুরা মুনা ফিক্কুন: ১০) তিন. মৃতদের কবর জিয়ারত করা হলে তার সওয়াব তাঁরা পাবেন।
কবর জিয়ারতের ব্যাপারে যেসব দোয়া হাদিসে এসেছে, তাতে এ কথারই প্রমাণ রয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করলে সে দোয়ার মাধ্যমে সে উপকৃত হবেন। হাদিসে বর্ণিত কবর জিয়ারতের একটি দোয়ার অর্থ এরকম, ‘এই কবরস্থানের বাসিন্দা মুসলিম-মুমিনদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হবো।’ (মুসলিম, ৯৭৪) চার. মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করলে তার ছাওয়াব দ্বারা তারা উপকৃত হবেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কোরবানির জন্য আনা হলো। ….. পশুটি জবেহ করার সময় তিনি (সা.) বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ! তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদির পক্ষ থেকে কবুল করো। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানি করলেন।’ (মুসলিম, ৫২০) পাঁচ. ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হজ। সামর্থ্য হওয়ামাত্র হজ সম্পাদন ফরজ। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বে হজ না করে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
আমাদের ভালোবাসার মানুষরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ সম্পাদনের আগেই যদি মৃত্যুবরণ করেন তাদের পক্ষ থেকে হজ সম্পাদন করার বিধান ইসলামে রয়েছে। কোনও ওয়ারিশ বা অন্য কেউ স্বেচ্ছায় তার পক্ষ থেকে বদলি হজ করলে এর দ্বারা ওই মৃত ব্যক্তির ফরজ হজ আদায় হয়ে যাওয়ার আশা করা যায়। বুরাইদাহ (রা.) বলেন, জনৈক মহিলা রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মা ইন্তিকাল করেছেন। তিনি হজ করেননি। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারি?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ করো।’ (মুসলিম, ৩৬২) ছয়. মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে রোজা রাখা। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এলো, অতঃপর সে বললো, হে রাসুল (সা.), আমার মা মারা গেছে, তার জিম্মায় এক মাসের রোজা রয়েছে, আমি কি তার পক্ষ থেকে কাজা করবো? রাসুল (সা.) বললেন, যদি তোমার মায়ের ওপর ঋণ থাকে, তার পক্ষ থেকে তুমি কি তা আদায় করবে? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেন, অতএব খোদার ঋণ বেশি হকদার, যা কাযা করা উচিত (বুখারি ও মুসলিম)। আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো এমতাবস্থায় যে তার ওপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশগণ রোজা রাখবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ (রহ.) বলেছেন, রাসুল (সা.) অনাদায়ী রোজাকে ঋণের সঙ্গে তুলনা করেছেন, ঋণ যে কেউ পরিশোধ করতে পারে। অতএব, প্রমাণিত হয় যে, মৃতের পক্ষ থেকে রোজা রাখা যে কারও পক্ষ থেকে করা বৈধ, শুধু সন্তানের সঙ্গে খাস নয়।
‘ওপারে ভালো থাকবেন’ এরূপ কথা কেবলই কথার কথা। মৃতব্যক্তির স্বাধীনভাবে কিছুই করার নেই। ওপারে সত্যিকার ভালো থাকতে হলে, মর্যাদা বৃদ্ধি পেতে হলে কেবল আল্লাহর অনুগ্রহেই তা সম্ভব। আর আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ পেতে আসুন তাঁরই নির্দেশিত পন্থায় প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্যরকম ভালোবাসা প্রকাশে আন্তরিক ও অকৃপণ হই।
লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল: zhossain1965@gmail.com