কাগজে-কলমে নির্বাচন কেমন হবে, তা নির্ভর করা উচিত নির্বাচন কমিশনের ওপর। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন বরাবরই এমন বশংবদ যে তাদের ওপর ভরসা করা যায় না। নির্বাচন কমিশন এবার সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিদের সামলাতে না পেরে সরকার প্রধানের সহায়তা চেয়েছে। সরকার প্রধান নিজে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রধানও। তার কাছে যদি নির্বাচন কমিশন সহায়তা চায়, তাহলে সেই কমিশনের ওপর আর ভরসা করার উপায় আছে? তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভরসা সেই সরকারই। কিন্তু বর্তমান দফায় সরকার যেমন আগ্রাসী ও একচ্ছত্রবাদী তাতে তাদের কাছ থেকে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা আর সুন্দরবনের গহীনে গিয়ে কান্নাকাটি করা সমান কথা। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের শুরু থেকেই বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সম্ভাব্য প্রার্থীদের ধরপাকড়, মামলা-হামলা, ভয়-ভীতি দেখানো ভালো নির্বাচনের ‘সম্ভাবনা’কে অনেক আগেই ‘সম্ভব না’তে বদলে দিয়েছে। ফেনীসহ অনেক জায়গায় বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারছে না।
তবুও আশার কথা হলো রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে শুরু থেকেই তারা নির্বাচন কমিশন আর সরকারের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তারা একাধিকবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নানা অভিযোগ জানিয়ে এসেছে। বিএনপি নির্বাচনে জেতার চেয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা বা দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়; এটা প্রমাণেই বেশি ব্যস্ত। বিএনপির অভিযোগ সবগুলোই সত্যি তেমন হয়তো নয়, তবে অধিকাংশ অভিযোগই সত্যি। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তো যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। সবচেয়ে মজার মন্তব্য করেছেন, মহাজোট সরকারের সঙ্গী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। তিনি বলেছেন, এক্স-রে করে নাকি দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নেই। তবে সবচেয়ে মজার কৌশল নিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ প্রায় প্রতিদিনই বিএনপি স্টাইলে সংবাদ সম্মেলন করছেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনছেন। এমনকি তারা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়েও এসব অভিযোগ জানিয়ে এসেছে। শুনে আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে, চোরের মায়ের বড় গলা। আক্রমণকেই মাহবুব আলম হানিফ প্রতিরক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায় বলে বেছে নিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের প্রতি নির্দয় আর বিএনপির প্রতি সদয় আচরণ করছে। তিনি বলেছেন, প্লেয়িং ফিল্ড মোটেই লেভেল নয়, বরং বিএনপি দিকে প্লাস। শুনে আমার দারুণ হাসি পেয়েছে। নির্বাচনের মাঠ লেভেল হোক আর না হোক অভিযোগের ক্ষেত্রে মাঠ দারুণ লেভেল।
তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেছেন, যেহেতু সব দলই তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার মানে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ। তার এই নিরপেক্ষতার দাবি শুনে আমার হাসি পেয়েছে। আমার বিশ্বাস হয়নি। আপনাদের কারও হয়েছে?
লেখক: অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।
ইমেল: probhash2000@gmail.com
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।