বাংলাদেশের জয় সবসময়ই আনন্দের। তবে বছরের শুরুতেই এমন একটি অসাধারণ জয় সমালোচনার তীরে বিদ্ধ ক্রিকেটারদের মনোবলকে চাঙা করবে। আর বাংলাদেশকে অনুপ্রাণিত করবে।
সুখবর শুধু ক্রিকেট মাঠেই নয়, এসেছে অর্থনীতির সূচকেও। ২০২১ ছিল নানান কারণে বাংলাদেশের মাইলফলক। মর্যাদা ও গৌরবের স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বছরটি পালিত হয়েছে। ২০২১ সালেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ফলে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। উন্নয়নশীল দেশ হলে অনেক সুবিধাই আর পাবে না বাংলাদেশ। সেই চ্যালেঞ্জে উতরে যেতে হলে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন করে দিয়েছে করোনা। দুই বছর ধরেই বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও গতি হারিয়েছে। কিন্তু নতুন বছরেই অর্থনীতির অন্তত তিনটি সূচকে এসেছে দারুণ স্বস্তির খবর। বছরের দ্বিতীয় দিনেই আসা তিনটি খবর আমাদের সামনের পথচলায় অনুপ্রেরণা জোগাবে।
করোনার ধাক্কা সামলে রফতানিতে অগ্রগতি হচ্ছিল কয়েক মাস ধরেই। কিন্তু গত ডিসেম্বরে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ডিসেম্বরে রফতানি হয়েছে ৪৯০ কোটি ডলার বা ৪২ হাজার ১৪০ কোটি টাকার পণ্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এত বিপুল পরিমাণ রফতানি হয়নি। আগের রেকর্ডও টাটকা। গত অক্টোবরে সর্বোচ্চ ৪৭২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। এটা ঠিক, রফতানির বড় অংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশ যদি রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে পারে এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করতে পারে তাহলে ‘উন্নয়নশীল’ থাকার ফাঁদে আটকে যাওয়ার আশঙ্কা সত্যি নাও হতে পারে।
তৈরি পোশাকের পর বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় খেলোয়াড় হলো রেমিট্যান্স। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থে আমাদের বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভে নতুন নতুন রেকর্ড হয়। করোনার শুরুর দিকে রেমিট্যান্সের ঢেউ লাগলেও পরে আবারও তা কমে যায়। এ কারণে কিছুটা শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। করোনার কারণে শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়া কমে গিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের শেষ দিকে এই সমস্যাও কেটে যায়। বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার বাজার খুলে যাওয়ার খবর চাঞ্চল্য আনে এই খাতে। গত ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৩ কোটি ডলার, যা নভেম্বরে ছিল ১৫৫ কোটি ডলার। যেখানে পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা সেখানে এই অগ্রগতি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখবে নিঃসন্দেহে। রেমিট্যান্স খাতের অগ্রগতি ধরে রাখতে সরকার প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে।
এরপরের সুখবরটি এসেছে রাজস্ব খাত থেকে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ সময় শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৭৩ কোটি টাকা। গতবছরের এই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
অন্য সূচকের সঙ্গে তুলনীয় হয়তো নয়। তবে নতুন বছরে শেয়ারবাজারেও নতুন হাওয়া লেগেছে। গত বছরের শুরুতে সূচকে দারুণ উল্লম্ফন ঘটলেও শেষটা ছিল মন্দার। কিন্তু নতুন বছরের প্রথম চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে সূচক বেড়েছে। সামগ্রিক অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রভাবই হয়তো পড়েছে শেয়ারবাজারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ২০২২ সালে বাংলাদেশের ফ্লাইং স্টার্ট হয়েছে। ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’ কথাটি যদি সত্যি হয়, বাংলাদেশের জন্য বছরটি দারুণ কাটবে। আমরা জানি, এ বছরেই বাংলাদেশের তিনটি মেগা প্রকল্প চালু হবে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে তা অর্থনীতিতে দারুণ মোমেন্টাম তৈরি করতে পারে। সব ঠিক থাকলে ২০২২ হতে পারে বাংলাদেশের সৌভাগ্যের বছর।
লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ