একজন স্বপ্নবাজ ফেরিওয়ালার জন্মদিন আজ

২৮ সেপ্টেম্বর; ১৯৪৭। বাঙালিদের এই অংশের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তারিখগুলোর একটি। সেদিন টুঙ্গিপাড়ায় যে মানুষটির জন্ম হয়েছিল তার হাত ধরেই জন্ম হয়েছে অগ্রসরমান বাংলাদেশের শত শত প্রতিরোধ আর উন্নয়নের গল্প। লেখা হয়েছে কোটি মানুষের দিন বদলের গল্প।

কে বলতে পারে, বাংলাদেশে এই মানুষটির জন্ম না হলে এই দেশটির ইতিহাসই হয়তো একটা অন্ধকারে ঢেকে যেত চিরতরে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়, তখন এক অনিশ্চিত অন্ধকারের পথে যাত্রা করে এই দেশ। মনে হচ্ছিলো, আমাদের সামনে এগোনোর আর কোনও উপায় নেই। সেই অন্ধকার থেকে বাংলাদেশকে আবার আলোর পথে নিয়ে এসেছেন ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরপরই জন্ম নেওয়া মানুষটি।

আজকে বাংলাদেশ যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হয়ে উঠেছে, তার নেপথ্য কারিগর অবশ্যই শেখ হাসিনা। শুধু প্রধানমন্ত্রী বলে বলছি না। সত্যিকার অর্থে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অসম্ভব এক গুণ আছে তার। ডিজিটালাইজেশনের স্বপ্ন আমাদের মধ্যে বুনে দিয়েছিলেন বলেই না আজ এই দেশের অধিকাংশ দাফতরিক কাজ অনলাইনে করা সম্ভব হচ্ছে। ধাপে ধাপে আমরা প্রত্যহিক জীবনের প্রতিটি কাজকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে পেরেছি।

ডিজিটালাইজেশনের একটা বড় রূপ হলো অর্থনৈতিক লেনদেনকে ডিজিটাল করা। আর এই কাজটিরও পথিকৃৎ হলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই বাংলাদেশে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসকে বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নেন। মোবাইল ওয়ালেট থেকে টাকা লেনদেন করা, কেনাকাটা করা, বিল দেওয়া; এসব কাজ করা সম্ভব, বাংলাদেশে এই ব্যাপারটি তার নেতৃত্বেই সংগঠিত হয়েছে। সোজা কথায় এক নতুন বাংলাদেশের ভিত গড়ে ছিলেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগান তুলে।

বাংলাদেশকে এই আলোকজ্জল পথে যাত্রা করাতে কম ঝড় সহ্য করতে হয়নি তাকে। ভাগ্যগুনে এবং সতীর্থদের ত্যাগে বারবার প্রাণে বেঁচে গেছেন। ১৫ আগস্ট হাতের কাছে থাকলে নিশ্চিতভাবে তাকেও হত্যা করা হতো। সে সুযোগ না পেলেও এরপর দফায় দফায় তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট মারার জন্য যে ভয়ানক যুদ্ধ অবস্থা তৈরি করা হয়েছিলো, তার নজির বিশ্বের কোথাও মেলা কঠিন। কিন্তু তিনি এতকিছুর মধ্যেও বেঁচে আছেন এবং লড়াই করে যাচ্ছেন। হয়তো অনাগত তরুণদেরকে দিনবদলের দিকে ছুটিয়ে চলতেই বেঁচে আছেন তিনি। কে বলতে পারে, বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে তুলে আনতেই আরও অনেক দিন আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াবেন তিনি।

শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদেরও রয়েছে নিবিড় এক ইতিহাস। তার এক অনন্য এক কীর্তি-নগদ। তিনি সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরই প্রশ্ন তুলেছিলেন, ডাক বিভাগ এই যুগে কেন সাবেক ভঙ্গিতে কাজ করে যাচ্ছে? তিনিই বলেছিলেন ডাক বিভাগকে নতুন কিছু করার জন্য। তার সেই আইডিয়া থেকেই জন্ম নেয় নগদ।

২০১৯ সালের ২৬ মার্চ তিনি নিজে উদ্বোধন করেন ডাক বিভাগের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নগদ-এর। সে সময়ই নতুন ইতিহাসেও ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের আর্থিক খাত। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়েই দেশে ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি সূচনা হয়– এরপরই তো বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশনের শুরুটা হলো।

সেই থেকে নগদ অনেক চড়াই-উৎরাই পার করেছে। আর এই প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিষ্ঠানটির পাশে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কখনও নিজে অনুশাসন দিয়েছেন সকল সরকারি ভাতা ‘নগদ’-এর মাধ্যমে বিতরণ করার জন্য। কখনও এই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে চলার পথে পরামর্শ দিয়েছে। কোনও ব্যক্তি পছন্দ বা অপছন্দ থেকে নয়; শুধু মাত্র দেশীয় একটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে বিকশিত করার জন্য অকুণ্ঠ এই সমর্থন দিয়ে গেছেন।

দেশেই জন্ম নেওয়া, দেশে সেবায় বেড়া ওঠা একটি মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারের বড় একটা অংশ নিয়ে নেবে– এটা শেখ হাসিনার একান্ত চেষ্টা ছাড়া কখনোই বাস্তবে রূপ পেতে পারতো না। তিনি চেয়েছেন বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বসে না থাকুক। তিনি চেয়েছেন ডাক বিভাগের বিশাল লোকবল ও বিশাল অবকাঠামো আধুনিক প্রযুক্তিতে কাজে লাগানো হোক। আর এই চাওয়া থেকেই আজ এগিয়ে চলেছে ‘নগদ’।

এই পর্যায়ে আমরা জোর গলায় বলতে পারি – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নগদ-এর একজন সম্মানিত গ্রাহক।

এখানে প্রসঙ্গক্রমে তার পূত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথাও বলা উচিত। এই পরিবারের সব সদস্যের কাছ থেকেই ‘নগদ’ পেয়ে থাকে শর্তহীন সমর্থন। সজীব ওয়াজেদ জয় সেই জায়গা থেকে নিজের মেধা ও উদ্ভাবনী কীর্তি দিয়ে ছাপ রেখেছেন নগদ-এর চলার পথে। আর এই সবকিছুই হয়েছে এক মহীয়সী নারীর কল্যাণে।

সেই নারী, সেই আলোকবর্তিকা শেখ হাসিনার আজ জন্মদিন। এই দিনটিতে পুরো নগদ পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা জানাই শুভেচ্ছা।

লেখক: ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা নগদ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক