অন্য নেতারা যে কথা বলতে পারে না, তিনি তা পারেন

সুইজারল্যান্ড সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে যেভাবে তাঁর অবস্থান তুলে ধরেছেন তা উপস্থিত সব সাংবাদিক ও অন্যান্য শ্রোতাকে বিমোহিত করেছে। তাঁর বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন সেন্টমার্টিন কাউকে লিজ দিয়ে তিনি ক্ষমতায় থাকতে চান না। তিনি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ অন্য কোনও দেশের কাছে লিজ দেওয়ার বিনিময়ে ক্ষমতা ধরে না রাখার ব্যাপারে তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। সেই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি তাঁর নেতৃত্বের অটল প্রত্যয় এবং জাতির স্বার্থের প্রতি অটল অঙ্গীকারের অসাধারণ প্রদর্শনী উপস্থাপন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ অন্যান্য শ্রোতা শেখ হাসিনার শক্তিশালী অবস্থান দেখে মুগ্ধ হয়েছেন এবং বাংলাদেশের প্রতি শেখ হাসিনার ভালোবাসার প্রশংসা করেছেন। শেখ হাসিনার আবেগপ্রবণ কথাগুলোর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছিল। তাঁর কথা শুনে মনে হচ্ছিল তিনি এমন একজন নেতা, যিনি জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবসময় অটল। তাঁর এই দৃঢ় প্রত্যয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের আগামীর রাজনৈতিক দৃশ্যপট এবং দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রত্যয় উভয়ই ফুটে উঠেছে।

সেন্টমার্টিন বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি অতি পুরনো এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ, যাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা হয়ে আসছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমার কাছে এর ভৌগোলিক অবস্থান। বছরের পর বছর ধরে এই দ্বীপকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের রাজনীতি হয়ে আসছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে একটি দেশকে এই দ্বীপ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ধরনের কোনও বিষয়কে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পক্ষের জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা। এটি বাংলাদেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের নীতি সমুন্নত রাখতে তাঁর প্রশাসনের অটল অঙ্গীকার প্রতিফলিত করেছে। এই ঘোষণাটি দেশের কৌশলগত স্বার্থকে সম্ভাব্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন যেকোনও সমঝোতার বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের ওপরও জোর দেয়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি দেশে স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়ন করেছেন। আঞ্চলিক অখণ্ডতাসহ জাতীয় গুরুত্বের বিষয়ে তাঁর দৃঢ় সংকল্প বাংলাদেশি জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম ভিত্তি হলো গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অটল অঙ্গীকার। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যে একটি দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র তখনই বিকাশ লাভ করতে পারে যখন একটি জাতির সার্বভৌমত্ব সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত থাকে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইজারা দেওয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে, তিনি দেশের ভূখণ্ডকে প্রভাবিত করে এমন সিদ্ধান্তগুলো জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে নেওয়া হয় এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে এবং বিশ্বমঞ্চে বিভিন্ন ধরনের স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করেছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া সরকারের সক্ষমতার কারণেই সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বিবৃতি আঞ্চলিক বিরোধ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁর সরকারের সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটিয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ব্যবহারের সম্ভাবনা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে শেখ হাসিনার সরকার একটি সুস্পষ্ট সংকেত দিয়েছেন যে বাংলাদেশ তার সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করার যেকোনও প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান গ্রহণ করেছে। এই দৃঢ় অবস্থান শুধু বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গেই সম্পর্কিত নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে দেশের অবস্থানকেও শক্তিশালী করেছে।

শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রত্যয়ের বৃহত্তর প্রভাবকে স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় তাঁর দৃঢ় সংকল্প ভবিষ্যতের নেতাদের জন্য একটি নজির স্থাপন করবে এবং স্বল্পমেয়াদি লাভের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। এই অটল সংকল্প নাগরিক এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে, যা একতা ও জাতীয় গর্বের বোধ জাগিয়ে তুলবে।

আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিষয়ে শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থানের কথাও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনে রাখা উচিত। দৃঢ়ভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে জড়িয়ে যেকোনও বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করে তিনি সার্বভৌম সীমানা এবং আইনের শাসনকে সম্মান করার তাৎপর্যকে সমুন্নত রেখেছেন। এই প্রতিশ্রুতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে এবং দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকাকে শক্তিশালী করবে।

জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনেকটা তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো, যা তাঁকে বাংলাদেশের কল্যাণে অতুলনীয় উৎসর্গের একজন নেতা হিসেবে আলাদা করেছে। তাঁর পিতার মতো তিনি ধারাবাহিকভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষার জন্য একটি অটল সংকল্প প্রদর্শন করেছেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব, এবং দেশের ইতিহাস ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে তাঁর গভীর উপলব্ধি তাঁকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে এবং সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, যা স্বল্পমেয়াদি লাভের চেয়ে জাতির দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। প্রতিশ্রুতি এবং নিঃস্বার্থতার এই স্তর তাঁকে অন্যান্য অনেক নেতার থেকে আলাদা করেছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই অবস্থান বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস জাগানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করবে। অন্য কোনও দেশকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ব্যবহার করতে না দেওয়ার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান দৃঢ়ভাবে জাহির করার মাধ্যমে তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বার্থ রক্ষার প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরদার করছেন। এই দৃঢ় বিবৃতি তাঁর অটল নেতৃত্ব এবং জাতীয় অখণ্ডতা সমুন্নত রাখার জন্য একটি শক্তিশালী অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হবে, যা নাগরিকদের তাঁর প্রতি আস্থা রাখতে উৎসাহিত করবে এই মর্মে যে তাদের নেতা দেশের কল্যাণ এবং ভবিষ্যৎকে সবসময় অগ্রাধিকার দেন। এই ধরনের জটিল বিষয়ে শেখ হাসিনার দৃঢ় ও অটল প্রত্যয় শুধু জনগণের আস্থাকে অনুপ্রাণিত করবে না বরং জনগণের মধ্যে ঐক্য ও জাতীয়তা বোধকে জাগিয়ে তুলবে। নেতৃত্বের এই অসাধারণ প্রদর্শন শেখ হাসিনার বিশ্বাসযোগ্যতাকে শক্তিশালী করবে এবং বাংলাদেশের মঙ্গলের প্রতি তাঁর অটল প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা রাখতে জনগণকে উৎসাহিত করবে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংক্রান্ত শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বিবৃতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করবে। একজন নেতা কতটা আত্মবিশ্বাসী হলে এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করতে পারেন। অনেক নেতার পক্ষেই এ ধরনের বক্তব্য প্রদান সম্ভব নয়।  তিনি বাংলাদেশকে এমন একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছেন যেখান থেকে এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করার সাহস পাচ্ছেন। এই বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে তিনি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচিত করেছেন। তাঁর এই শক্ত অবস্থান একদিকে যেমন বাংলাদেশের জনগণের কাছে তাঁকে আরও বিশ্বাসী করে তুলবে, ঠিক তেমনি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠাবে এই মর্মে যে শেখ হাসিনার দৃঢ়তা কেবল গণতন্ত্র এবং নাগরিকদের কল্যাণের প্রতি তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতিই পুনর্ব্যক্ত করে না, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকেও শক্তিশালী করেছে।

লেখক: অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।