ঘোষিত বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ ও ক্যাশলেস সমাজ বিনির্মাণের জন্যে অনেক ইতিবাচক দিক আছে। সে কারণে মোটা দাগে বাজেট নিয়ে আমি খুশি। তবে আমাদের চাহিদা তো দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়া। ফলে আরও কিছু বিষয় এখানে সন্নিবেশিত হওয়া জরুরি বলে মনে করি।
ইতোমধ্যে সরকার ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছে এবং অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বাজেট বক্তৃতায় তার প্রতিফলনও এসেছে। আমি মনে করি এটি খুবই ইতিবাচক দিক।
আমার বিবেচনায় এখানে আরও যে বিষয়গুলো আসা দরকার ছিল তা হলো– ক্যাশলেস লেনদেনকে জনপ্রিয় করতে সরকারের দিক থেকে উদ্যোক্তাদের কিছু প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এই দিকটি বাজেটে অনুপস্থিত। বাজেট পাসের আগেই অর্থমন্ত্রী এই দিকটি ইতিবাচকভাবে ভাববেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
অর্থমন্ত্রী যথার্থভাবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ওঠার পেছনে মোবাইল আর্থিক সেবার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। মোবাইল আর্থিকসেবা প্রতিষ্ঠাগুলো নিয়ে নানান উদ্যোগ গ্রহণের ফলে দেশে এক ধরনের আর্থিক বিপ্লব হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৮ কোটি ৩৭ লাখ সক্রিয় মোবাইল আর্থিকসেবা ব্যবহারকারী আছেন; নিবন্ধিত অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২২ কোটির ওপর।
মোবাইল আর্থিকসেবা সংস্থাগুলোর কারণেই সরকারি ভাতা ও বরাদ্দ সঠিকভাবে উপকারভোগীর হাতে পৌঁছাচ্ছে বলেও অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। এখানে আমি বিনয়ের সঙ্গে যোগ করতে চাই যে ভাতা ও বরাদ্দ সঠিক ও স্বচ্ছভাবে বিতরণে মোবাইল আর্থিকসেবা নগদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
আমার বিবেচনায় আরও বড় ইতিবাচক দিক হলো সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর করোনাকালীন বিশেষ সহায়তা বিতরণের মাধ্যমে আমরা সরকারের আস্থা অর্জন করি, যার প্রতিদান এখন পাচ্ছে দেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, নগদ এখানে সবার চেয়ে এগিয়ে। সব মিলে আমরা ২৭টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে সরকারের সহায়তা বিতরণ নিয়ে কাজ করি।
এই উদ্যোগ একদিকে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ার পথে অনেক এগিয়ে দেবে, আবার ডিজিটাল লেনদেনকেও জনপ্রিয় করবে।
আরও একটি ভালো লাগার দিক হলো– তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য আরও তিন বছরের কর মওকুফ করা হয়েছে। এই দাবিটা একজন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে অনেক দিন ধরে করে আসছি আমরা। সেটাকে সমর্থন দেওয়ায় অর্থমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ। এখানে আরও একটি অসামান্য শর্ত রাখা হয়েছে। সেটা হলো এই কর মওকুফ সুবিধা তারাই পাবেন, যারা সব লেনদেন ক্যাশলেস পদ্ধতিতে করবেন।
তবে সত্যিকার অর্থে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের মোট লেনদেনের ৩০ শতাংশ ক্যাশলেস করা বা ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস লেনদেন চালু করা অথবা ২০৩১ সালের মধ্যে দেশকে পরিপূর্ণ ক্যাশলেস করা– এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্যে ডিজিটাল ব্যাংক হবে প্রধান বাহন। আর ডিজিটাল ব্যাংককে এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আশা করি বাজেট পাসের আগেই অর্থমন্ত্রী এই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি।