গতকাল অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী শহীদ মিনারে মিলিত হয়েছেন। ড্রোন শট দিয়ে ওপর থেকে ছবিটি দেখতে খুব সুন্দর। সমস্যা হলো সুন্দরের আড়ালে অসুন্দরও লুকিয়ে থাকে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সব হত্যার বিচার চায়। তারা ক্ষুব্ধ, তারা বড় আঘাত পেয়েছেন। খুব স্বাভাবিক, কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনে এত মানুষের প্রাণ গেছে, এটি দেশের কেউ স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। আপনারা গেলেন কোটার সংস্কার করতে, সেখানে আঘাত পেয়ে বিচার চাইছেন। বিচার ব্যবস্থায় আস্থা নেই, নয় দফা চাইছেন। তারপর চাইলেন এক দফা। বলে ফেললেন, সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্রসংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে একটি সম্মিলিত মোর্চা গঠন করার কথা। বলে ফেললেন, সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা সবার সামনে হাজির করবেন। অর্থাৎ দাবি আদায় ছাড়া যেখানে ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেওয়ার কথা, সেখানে আপনারা রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ দেখাচ্ছেন? কোটা থেকে সরাসরি চলে গেলেন মোর্চা গঠন করে বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরিতে?
‘মাথাহীন মোরগ’ হলে যা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের এখন একই অবস্থা। গোপনে কলকাঠি নাড়লেও কেউ প্রকাশ্যে আসবে না। নিশ্চিত থাকেন। কারণ, হত্যার বিচারের দাবির চাইতে শেখ হাসিনার পদত্যাগই এখন মুখ্য। তারা তো এখন আর চাকরি না, ক্ষমতা চায়।
নয় দফা দিলো, বিচার চাইলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার ডাক দিলেন। সব শিক্ষার্থীকে মুক্তির নির্দেশ দিলেন। যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অপরাধ করেছে তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন, সামনে বাকিদেরও নেবেন। আইনের আওতায় আনবেন। তিনি বললেন, সংঘাত চাই না। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পদত্যাগের একদফা দিয়ে দিলো। যে দাবি জামায়াত-বিএনপির দীর্ঘদিনের। এখন আন্দোলনে আসা সাধারণ শিক্ষার্থী এবং মানুষগুলোও আপনাদের কি ছেড়ে দেবে? তারা তো বিচারের দাবিতে এসেছেন। অনেকে এক দফার সঙ্গে একমত হতে পারেন। গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ দাবি করতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক অভিলাষ দেখানো মানে হলো সবার আবেগকে ব্যবহার করা। এক দফার পর অনেকেই লাল থেকে কালোতে ফিরে আসছেন।
তাই এখন আমাদের হিসাবটাও ভিন্ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বিচারের কথা বলেছেন, আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ আপনারা প্রত্যাখ্যান করে এক দফায় গেছেন। এখন হত্যার বিচারের আর কোনও দাবি নাই।
আপনাদের আন্দোলনের হিসাবটা শুরু থেকে এটাই ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কিছু যৌক্তিক আবেগকে ব্যবহার করেছেন। সাধারণ মানুষের সমর্থন দেখে অতি লোভে চরম ভুলটা করলেন। কারণ, মূল দাবি কোটার হিসাবটা তো অনেক আগেই শেষ।
মোটা বুদ্ধিতে নতুন সরকারের দাবি জানালেন, কীভাবে হবে, কে হবে– কোনও নির্দেশনা ছাড়া! দেশ ও রাজনীতি কি ছেলের হাতের মোয়া নাকি? হেফাজতের মতো একই ভুল আপনারাও করলেন। লোক দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।
শহীদ মিনারে আপনাদের যা লোক হয়েছে এর অর্ধেকের বেশি বিএনপি-জামায়াত। আওয়ামী লীগেরও তো সমর্থন কম নয়। তারা চাইলেই এর চেয়ে বেশি লোক জড়ো করতে কি পারে না?
একটা দেশকে সংঘাতমুক্ত করতে আপনাদেরই সহযোগিতা করতে হবে। আপনারা অবশ্যই দেশের ভবিষ্যৎ। আপনারা ছাত্র, এখনও পড়াশোনা করছেন। যোগ্য হয়ে অবশ্যই দেশকে নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু সামনে হাজার শিক্ষার্থী দেখে ক্ষমতার লোভটিকে সংবরণ করে আলোচনার টেবিলে সমাধান করাই শ্রেয়।
লেখক: প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপ-প্রেস সচিব