কালের স্পর্ধা নেই বঙ্গবন্ধুকে বিস্মৃত করার

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরীফিদেল কাস্ত্রো প্রথম সাক্ষাতে বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু আপনাকে দেখেছি’। এটা ছিলো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কাস্ত্রো'র মূল্যায়ন। ফিদেল কাস্ত্রো ছোটো-খাটো কেউ নন। তিনিও ছিলেন বিশ্বের সেরা বিপ্লবীদের একজন। প্রথম সাক্ষাতের সময় কাস্ত্রো নাকি বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন। আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘ সময়ব্যাপী কাস্ত্রো পাল্লা দিয়ে চলেছেন। কোনও ষড়যন্ত্রই কাস্ত্রোকে নিঃশেষ করতে পারেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আত্মবিশ্বাসী সহজ সরল মানুষ, সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিলো পাক-মার্কিন চক্র। বঙ্গবন্ধু নির্মম মৃত্যুর পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছিলো। কাটার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন। তিনি নিউইয়র্কের এক প্রাইমারিতে বক্তৃতায় বলেছিলেন- তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সিআইএ-কে প্রতিরোধ করবেন আলেন্দে এবং শেখ মুজিবের মতো আর কাউকেও যেন হত্যা করতে না পারে।
১৯৭৪ সালে ভুট্টোকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ করাই ঠিক হয়নি। বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থী লোক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিমান বন্দরে এবং শহরমূখী সড়কে একত্রিত হয়েছিলো। প্রচুর লোক সমাগম দেখে ভুট্টো মনে করেছিলেন তিনি বঙ্গবিজয় করে ফেলেছেন। পাকিস্তানে গিয়ে তিনি গভীর ষড়যন্ত্র পাকাতে দ্বিধা করলেন না আর ভুট্টোর সফরে উৎসাহিত হয়েছিলো বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের এজেন্টরা। সফরের সময় ভুট্টো অপমানজনক কথাবার্তাও বললেন। বাংলাদেশ যখন দু-দেশের সম্পদ বাটোয়ারা সম্পর্কে প্রশ্ন উপস্থাপন করলেন তখন ভুট্টো বললেন যে তিনি অর্থনীতি বিভাগের কোনও লোক সঙ্গে আনেননি এবং তিনি চেক বইও ফেলে এসেছেন। তিনি চিন্তাও করেননি যে বাংলাদেশ এ বিষয়টা উপস্থাপন করবেন। ভুট্টো কোনওভাবেই রাজী হচ্ছিলেন না সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, ভুট্টো যদি জাতীয় স্মৃতিসৌধে না যান তবে তাকে দু’ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে হবে কারণ বাংলাদেশ তার সফর বাতিল করে দেবে। অপমানিত হওয়ার ভয়ে কিছুটা অপমানিত হয়ে তিনি সাভার সৃতিসৌধে গিয়েছিলেন।সব কিছুরই প্রতিশোধ নিলেন ভুট্টো।
জেনারেল রাও ফরমান আলী তার বইয়ে বলেছেন- পাকিস্তানে ভুট্টোই হচ্ছে পাকা ষড়যন্ত্রকারী। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্বে কাশ্মীরে অস্ত্রশস্ত্রসহ মোজাহিদ ঢুকানো হয়েছিলো ভুট্টোর পরামর্শে আর যুদ্ধও বাদানো হয়েছিলো তার পরামর্শে। এ সবই নাকি ভুট্টো করেছিলেন আইয়ুব খাঁনকে দুর্বল করে তাড়াবার ষড়যন্ত্র হিসাবে। আমেরিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক স্থাপনে দূতীয়ালী করেছিলেন ভূট্টো। সে ফাঁকে তিনি আমেরিকার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রও পাকিয়ে ছিলেন। সফলও হয়েছিলেন। শুধু বঙ্গবন্ধু নন স্বাধীনতার অন্য স্থপতিদেরও জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের দেশিয় এজেন্টরা। অবশ্য ভুট্টোর পরিণতিও ভাল হয়নি। আমেরিকাই তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। জেনারেল জিয়াউল হককে দিয়ে। লাহোরের মসি গেইটে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগতপত্র জনসভায় পাঠ করে শুনানো আর ঘৃণাভরে তা সমাবেশে টুকরা টুকরা করে ছিড়ে ফেলাকে আমেরিকা তার জাতীয় মর্যাদার অবমাননা বলেই স্থির করে নিয়েছিলো। কিসিঞ্জার সেদিন রাতেই ভুট্টোকে নিক্সনের পত্র জনসভায় পাঠ করা ও জনসভায় পাঠ করে ছিড়ে ফেলার পরিণতি সম্পর্কে হুশিয়ার করেছিলেন। ভুট্টো সেই পরিণতিও জীবন দিয়ে ভোগ করে ছিলেন। যাক বলছিলাম ভুট্টোর ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ সফরের কথা। সেই সময়কার পর রাষ্ট্রসচির ফকরুদ্দীন আহাম্মদ অবসরে গিয়ে ‘ক্রিটিক্যাল টাইমস’ নামে একখানা স্মৃতিচারণ ও আত্মজীবনী মূলক বই লিখেছেন। তাতেও দেখি তিনি ভুট্টোর এ সফরে উৎসাহবোধ করেননি।

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছিলো আওয়ামী লীগ তাকে সফলভাবে আত্মস্থ করতে পেরেছিলো এবং আওয়ামী লীগের সে সফলতার শেষ পরিণতিই ছিলো সফল মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। বঙ্গবন্ধু খুবই ধীর স্থির প্রকৃতির লোক ছিলেন। বাইরে দেখতে বঙ্গবন্ধুকে হয়ত কেউ চঞ্চল বলেও অবহিত করতে পারেন কিন্তু ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন রোজগার্ডেনে যেদিন আওয়ামী লীগের জন্ম হয় সেদিন থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্য রাত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর কর্মকৌশল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তার প্রতিটি কৌশলই ছিলো কালজয়ী এবং অভ্রান্ত। দেশ  স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হলেন। এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের এক ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন। পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা ও প্রণয়ন করেছিলেন। কৃষি ধ্বংস হওয়ায় ১৯৭২ সালে ৪০ লক্ষ্য টন খাদ্য ঘাটতি হয়। অথচ এ খাদ্য ঘাটতির মাঝে ৯০ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দী, সোয়া লাখ ভারতীয় সৈন্য, ৩৭ হাজার বন্দী রাজাকার ও দালালের খাদ্য সরবরাহের কঠিন দায়িত্বও বঙ্গবন্ধুর সরকারকে পালন করতে হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী সমগ্র বাংলাদেশে ৪৩ লক্ষ্য ঘর বাড়ি, ১৯ হাজার গ্রাম্য-হাট বাজার, ৩ হাজার অফিস ভবন, ৬ হাজার প্রাইমারি স্কুল ও মাদ্রাসা, ৯  শত হাই স্কুল ও কলেজ পুড়িয়ে দিয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০০ শত রেল সেতু ধ্বংস হয়েছিলো আর ২০০ মাইল রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। দেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে পাক সেনারা মাইন পোতার কারণে বন্দর দু’টাই অচল ছিলো। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও বিধ্বস্ত ছিলো। মুদ্রা ব্যবস্থা প্রবর্তন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠন, তফসিলি ব্যাংক ও বীমা পুনগঠন ছিলো তখন সরকারের জরুরি কাজ। যুদ্ধের পরবর্তী কাজগুলো প্রায় যুদ্ধের মতোই ছিলো। আর তখন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজন ছিলো খুবই বেশি।

দেশের এমনি এক ক্রান্তিলগ্নে সিরাজুল আনাম খান, আ.স.ম আবদুর রব, শাহাজান সিরাজ প্রমুখ আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জাসদ গঠন করলেন। তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের চটকদার স্লোগান দিলেন। পলাশীর ময়দানে মীর জাফর আলী খান সিরাজের সঙ্গে যে আচরণ করেছিলেন এরাও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাই করলেন। আবার আরেক দল বামপন্থীও ময়দানে অবতীর্ণ হলেন বিপ্লব করার জন্য। আলাউদ্দিন, মতিন, হক, তোয়াহা, দেবেন সিকদার, সিরাজ সিকদার, জিয়াউদ্দিন  প্রমূখ। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী আর বিপ্লবীদের হাবভাব দেখে তখন মনে হতো বিপ্লব ছাড়া অন্যকোনও চিন্তার অবকাশ নেই। তখন বাংলাদেশে একমাত্র বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হাতিয়ার ছিলো পাটশিল্প। এরা প্রতিনিয়ত পাটের গুদামে আগুন দিত। পাট ও পাটশিল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসা এক প্রকার অনিশ্চিয়তার মুখে পড়লো এদের কারণে। তারা হিংসার আগুন এমনভাবে ছড়ালেন যে অহিংসাকে মেদিনীও দিলেন না। ঈদের ময়দানে তারা আওয়ামী লীগের এমপি হত্যা করলেন। অথচ তখন সর্বক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ আর শৃঙ্খলারই প্রযোজন ছিলো বেশি-জাতি গঠনের জন্য। লেলিন বলেছেন, ‘ভবিষ্যতের কোমল স্বপ্নে বিভোর হয়ে যে উপস্থিত কঠিন কর্তব্য অস্বীকার করে সেই সুবিধাবাদী’। আমার এক বামপন্থী বন্ধু কমরেড মেহেদী অনুতাপ করে একবার বলেছিলেন আমাদের নেতারা সমাজতন্ত্র, বিপ্লব কিছুই বুঝতেন না, তারা সারাজীবন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর আমরা সে সিদ্ধান্তের পেছনে ঘুরেছি এখন সব ব্যর্থতার গ্লানি আর অনুতাপের বোঝা নিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি।’  সত্যিই বিপ্লবীরা একে একে সবাই গত হয়েছেন ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে। আর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা এখন রাজনীতির বৈরাগী। একতারা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ভিক্ষার সন্ধানে। কাপালিক সিরাজুল আলম খান এখন জীবন খাটায় প্রায় বিদেশের মাটিতে। হায়রে কপাল পিতৃপ্রতিম বঙ্গবন্ধু এদেরকে নিজ হাতে তৃণমূল থেকে উর্ধমর্গে তুলে এনেছিলেন একটা জাতি গঠনের জন্য, একটা জাতির দাসত্বের শৃঙ্খল মোচনের জন্য, আর  এরাই পৃষ্ঠে ছুরিকাঘাত করলো মাঝপথে।

স্বাধীনতার পর বিধ্বস্ত জাতি গঠনের কাজটা ছিলো বাঙালি জাতির  ইতিহাসে যুগসন্ধিক্ষণ। লেলিন বলতেন, এশিয়ায় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে সহায়তা প্রদান করা কমিউনিস্টদের দায়িত্ব। মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রথমে লেলিনের এ বক্তব্যে আপত্তি করলেও পরে লেলিনের প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলেন। কাপালিক সিরাজুল আনাস খান সমাজতন্ত্রের ধারাপাঠ রপ্ত না করেই সমাজতন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। নীফা নদীর তীরে ভ্লাদিমির মুর্তি ভাঙতে চেয়েছিলো বিপ্লবীরা। তখন লেলিন মূর্তি ভাঙতে বারণ করে বিপ্লবীদেরকে বলেছিলেন, ইতিহাস সাম্প্রতিক সময়ে সীমাবদ্ধ নয় ইতিহাসের অতীতও রয়েছে। ভ্লাদিমির প্রশংসা করে লেলিন বলেছিলেন, ভ্লাদিমি খণ্ড খণ্ড ইউক্রেনকে একত্রিত করে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য তৈরি করেছিলেন। ইউক্রেনের জন্য বহু ত্যাগ রয়েছে। ভ্লাদিমি শিক্ষিত সার্জেন আর নাপিত সার্জেনের মাঝে নিশ্চয়ই ব্যবধান রয়েছে। কাপালিক সিরাজুল আনম খানেরা ছিলেন সমাজতন্ত্রের নাপিত সার্জেন।

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ভ্রান্ত ধারণায় সিরাজুল আনম খানেরা জাতির অপূরণীয় ক্ষতি করেছিলেন তার সব কিছু লিখতে গেলে এ ক্ষুদ্র প্রবন্ধে শেষ করা সম্ভব হবে না। উত্তেজনাকর স্লোগান তুলে কোমলমতি কর্মীদেরকে পাগল করে তোলো সম্ভব  কিন্তু কর্মসূচি বাস্তবে রূপ দেওয়া খুবই কঠিন। এই সিরাজুল আনম খানেরা চেয়েছিলেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু পরিস্কার স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করুক। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা না করে তার দাবির কথা এবং স্বাধীনতার কথা সমান্তরালভাবে পেশ করেছিলেন। ৭ মার্চ রেডিও- টেলিভিশন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করার কথা ছিলো, কিন্তু পাকিস্তানিদের হস্তক্ষেপে তা করা সম্ভব হয়নি। তখন অনেক বিপ্লবী শাহাবাগের রেডিও স্টেশনে আগুন দিতে চেয়েছিলেন অথচ বঙ্গবন্ধু বললেন- রেডিও টেলিভিশন যদি আমাদের কথা প্রচার না করে তবে বাঙালিরা কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন। জেনারেল রাও ফরমান আলী তার বইতে লিখেছেন বাঙালিদেরকে কাজে যোগদানের ব্যবস্থা করতে তারা তার পরদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারে বাধ্য হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সুকৌশলে অগ্রসর হয়েছিলেন তাই লোকক্ষয় হলেও স্বাধীনতাটা সহজলভ্য হয়েছিলো।

মওলানা ভাসানী এবং অলি আহাদ বহুদিন আগেই স্বাধীনতার বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন এবং তারা ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন কিন্তু ভারত সরকারের অসম্মতির কারণে তারা আর বেশিদূর অগ্রসর হননি। সম্ভবতো বিশ্ব দরবারে  বিচ্ছিন্নতার সহযোগিতার অভিযোগের কথা চিন্তা করে ভাসানী অলি আহাদের প্রস্তাবে সম্মত হননি ভারত। আর বঙ্গবন্ধু নির্বাচন করলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেন, ৭ মার্চ এর ভাষণে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি পেশ করলেন, পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ২৫ মার্চ নির্বিচারে বাঙালি হত্যা করার কাজ আরম্ভ করলেন আর ২৫ মার্চ এর মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন।এটিই ছিলো সঠিক সময়।

বিশ্বের কোনও রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারলেন না। বরঞ্চ সারা বিশ্বের সহানুভূতিই পেলেন। আর বাংলাদেশের অভ্যুদয় হলো স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার পর চার কুচক্র মহল জন্ম নিল বঙ্গবন্ধুকে খতম করার মানসিকতা নিয়ে। (ক) দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানপন্থীরা, যাদের কাছে অর্থবিত্ত ছিলো প্রচুর। (খ) বামপান্থী বিপ্লবীরা, যাদের পক্ষ হয়ে কমরেড আব্দুল হক ভুট্টোর কাছে অস্ত্র চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন যা ভুট্টোর জীবনীগ্রন্থে উল্লেখ আছে। (গ) বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা (ঘ) পাকিস্তান থেকে আগত এবং বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীতে পুর্নবাসিত অফিসারেরা, যারা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমাণ্ডার জিয়াকে তাদের নেতা হিসাবে সামনে রেখে অগ্রসর হয়েছিলেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ বলেছেন- তিনি নাকি জিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি কেন তাহেরকে ফাঁসি দিয়েছিলেন। উত্তরে জিয়া বলেছিলেন, পাকিস্তান ফেরৎ অফিসারদের প্রেসারে। পাক-মার্কিন লবিংয়ে চার-কুচক্রির সহযোগিতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিলো। তাকে হত্যা করেছে সত্য কিন্তু কালেরও স্পর্ধা নেই তাকে বিস্মৃত করার। শেখ হাসিনা ভাগ্যের ফেরে বিদেশে ছিলেন বলে বেঁচে গিয়ে আজকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

জয়তু শেখ মুজিব!