প্রাণী সরবরাহ সংকট: বাংলাদেশের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পথে অন্তরায়

সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। পড়াশোনা ও রাতের খাবার শেষ করেছি কেবল। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোনটি সাইলেন্ট মুডে রাখার জন্য বোতামে চাপ দিতে যাবো, ঠিক এমন মুহূর্তে যন্ত্রটি গর্জে উঠলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জাঁদরেল অধ্যাপকের কাছ থেকে ফোন এসেছে। কল রিসিভ বোতামে চাপ দিতেই তিনি আমন্ত্রণ ও আদেশ দিলেন স্বাস্থ্য বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। দেশ ও দেশের বাইরে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এমন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক, প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বর্তমান ও সাবেক প্রশাসক, নীতিনির্ধারক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পটভূমির লোকজন এখানে জমায়েত হবেন বলে জানালেন তিনি। জনস্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ক্যাটাগরিতে তিনি আমাকে নির্বাচন করেছেন বলে জানাতে ভুললেন না। তো, কথামতো সেদিন অনুষ্ঠানে গেলাম আমি।

অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ামাত্র আমার এক ধরনের আড়ষ্টতা গ্রাস করতে শুরু করে। কারণ আমন্ত্রিত উপস্থিতিদের  মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠতম ছিলাম আমি। বিদ্যাবুদ্ধি, জানাশোনা ও অভিজ্ঞতার দিক থেকেও তলানির দিকে আমার অবস্থান- তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। যাহোক, আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞগণ বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতের সমস্যা, সম্ভাবনা, করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন বিস্তর। দেশের স্বাস্থ্য খাতের সমস্যার প্রশ্নে তারা যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি, আজকের এই আলোচনাটি তা নিয়েই।    

জৈবপ্রযুক্তি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণায় অগ্রগতি নির্ভর করে একটি দেশের গবেষণা অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং নীতিগত সহায়তার ওপর। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওষুধ শিল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রাণিভিত্তিক গবেষণায় এখনও রয়েছে সুস্পষ্ট সীমাবদ্ধতা। উপযুক্ত প্রাণী সরবরাহের ঘাটতি, নীতিমালার অস্পষ্টতা এবং জনবল ও অবকাঠামোর অভাব- এসব চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বাধা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের গুরুত্ব অপরিসীম। ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, এই গবেষণা প্রক্রিয়া নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ওষুধ উদ্ভাবনের ভিত্তি স্থাপন করে। যদিও মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অত্যাবশ্যক, কিছু প্রাক-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে প্রাণীর মডেল ব্যবহার করা হয়, যা কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাধ্যতামূলক।

তবে, বাংলাদেশে প্রাণিভিত্তিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা এবং বাধা বিদ্যমান, যা এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ক্ষেত্রের অগ্রগতিকে ব্যাহত করে। এই প্রবন্ধে আমরা বাংলাদেশের প্রাণিভিত্তিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বর্তমান চিত্র, বিদ্যমান সমস্যা, নীতিগত দুর্বলতা, চলমান উদ্যোগ এবং একটি শক্তিশালী ও নৈতিক গবেষণা ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশগুলো তুলে ধরবো।

বহুমুখী সংকট

প্রাণিভিত্তিক গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান সংকটগুলোকে মূল দিক দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়: প্রাণী সরবরাহের ঘাটতি, নৈতিক ও আইনি জটিলতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, দক্ষ জনবলের অভাব, আর্থিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত গুণমান ও পরিমাণের প্রাণীর (যেমন- ইঁদুর, খরগোশ, বানর) তীব্র ঘাটতি রয়েছে। গবেষণার জন্য প্রাণীর অভাব মূলত বিশেষায়িত প্রজননকেন্দ্রের অভাব থেকে উদ্ভূত। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় কঠোর মানের প্রাণী উৎপাদনের সক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রের সংখ্যা খুবই কম, ফলে গবেষকরা প্রায়ই বিলম্বের সম্মুখীন হন বা ব্যয়বহুল আমদানির ওপর নির্ভর করেন।

সীমিত সংখ্যক স্থানীয় প্রজনন কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাণীর সংখ্যা ও গুণমান উভয় ক্ষেত্রেই ঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলেও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাণীর সরবরাহ সংক্রান্ত তাদের নির্দিষ্ট ভূমিকা স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় গবাদিপশু প্রজনন ও দুগ্ধ খামার মূলত কৃষিক্ষেত্রে গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করে। বিশেষত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বিশেষায়িত প্রজননকেন্দ্রের অভাব, বায়োমেডিক্যাল গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাণীর নিয়মিত এবং মানসম্পন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি বড় বাধা।

দেশে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধের লক্ষ্যে ২০১৯ সালে প্রাণিকল্যাণ আইন পাস হয়। এই আইন অনুযায়ী গবেষণায় প্রাণীর ব্যবহার নির্দিষ্ট নিয়মে সীমিত। তবে আইনটির ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়নে অস্পষ্টতা ও দ্ব্যর্থতা গবেষক ও প্রতিষ্ঠানকে প্রায়শই আইনি ঝুঁকির মুখে ফেলে। এই আইনে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

তবে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রাণী ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। ফলে আইনের এই অস্পষ্টতা, এর বাস্তবায়ন ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে জটিলতা প্রায়ই দেখা যায়। অন্যদিকে শিক্ষা ও গবেষণার নামে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা না ঘটে তা নিশ্চিত করাও জরুরি। এছাড়াও কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনও আদালত কর্তৃক প্রাণী নিষ্ঠুরতার অভিযোগ আমলে না নেওয়ার বিধান রয়েছে, যা গবেষণা ক্ষেত্রে প্রাণী কল্যাণ সংক্রান্ত উদ্বেগের আইনি প্রতিকারের সুযোগকে সীমিত করে। প্রাণী কল্যাণ ও অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা গবেষণার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক নির্দেশিকা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের অনেক গবেষণাগারে প্রাণী রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক সুবিধা, যেমন- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা, পরিচ্ছন্ন বায়ু প্রবাহ, ও জৈব-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো প্রাণীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে, গবেষণার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের প্রাণী পরিচর্যা ব্যবস্থার অভাব। যদিও আইসিডিডিআর,বির মতো কিছু প্রতিষ্ঠানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ) কর্তৃক প্রত্যায়িত আধুনিক সুবিধা রয়েছে। তবে এটি ব্যতিক্রম। সর্বজনীন চিত্র নয়। অনেক পরীক্ষাগারেই আধুনিক সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবকাঠামোগত মানের এই পার্থক্য নির্ভরযোগ্য প্রাণিভিত্তিক গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এদেশে পশু ব্যবস্থাপনা, প্রোটোকল মেনে পরীক্ষা পরিচালনা, ও তথ্য বিশ্লেষণের জন্য প্রশিক্ষিত গবেষক ও টেকনিশিয়ানের সংকট রয়েছে। এটি বাংলাদেশে প্রাণিভিত্তিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের একটি উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা। এই দক্ষতার ঘাটতির কারণে প্রাণীদের ভুলভাবে লালন-পালন, ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা সম্পাদন ও ভুল ডাটা বিশ্লেষণের ঝুঁকি বাড়ে, যা গবেষণার নির্ভরযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

উন্নত প্রাণী কল্যাণ নীতি অনুসরণকারী দেশগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) মতো প্রতিষ্ঠানে প্রাণী কল্যাণ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে, যা এই ঘাটতি পূরণে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে, বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের অভাব এখনও বিদ্যমান।

 গবেষণার জন্য প্রাণী আমদানি বা স্থানীয়ভাবে প্রজননের উচ্চ ব্যয় বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য প্রয়োজনীয় বাজেট অধিকাংশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নাগালের বাইরে। সীমিত তহবিল প্রাণিভিত্তিক গবেষণার সুযোগ এবং গুণমান উভয়কেই সীমাবদ্ধ করতে পারে। বাংলাদেশে ওয়ান হেলথ উদ্যোগের মতো প্রাণী স্বাস্থ্য গবেষণা কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব একটি সাধারণ সমস্যা। আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছোট গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যা সামগ্রিক গবেষণা সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।

প্রাণী পরীক্ষার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা এবং প্রতিবাদ বাংলাদেশে গবেষণা কার্যক্রমকে সীমিত করতে পারে। প্রাণীদের প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে তাদের প্রধানত অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে গণ্য করা হয়, প্রাণী গবেষণার নৈতিক দিক সম্পর্কে জনসচেতনতার অভাবকে প্রতিফলিত করতে পারে। রাস্তার প্রাণীদের প্রায়ই সমস্যা হিসেবে দেখা হয়, যা গবেষণা প্রাণীদের প্রতি বৃহত্তর সহানুভূতি এবং সমর্থন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি বাধা হতে পারে। জনসচেতনতা এবং নৈতিক বিবেচনা উভয় ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রক্ষা করা প্রয়োজন।

আইনি ও  নীতিগত দুর্বলতা

গবেষণায় প্রাণী ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমস্যাকে তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়। আর সেগুলো হলো আইনি, নীতিমালা সম্পর্কিত ও প্রশাসনিক। বিদ্যমান প্রাণী কল্যাণ আইনটি সাধারণভাবে প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করলেও, গবেষণায় প্রাণী ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনা নেই। নৈতিক বিবেচনা এবং বৈজ্ঞানিক চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রণয়ন করা অত্যাবশ্যক পড়েছে। অন্যদিকে জৈবপ্রযুক্তি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণার জন্য জাতীয় নীতি বিদ্যমান থাকলেও, প্রাণিভিত্তিক গবেষণার জন্য একটি স্বতন্ত্র জাতীয় নীতি নেই। এই ধরনের একটি নীতি নৈতিক মান, অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয়তা এবং এই বিশেষ গবেষণা ক্ষেত্রের জন্য তহবিলের অগ্রাধিকার নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবও আরেকটি বড় সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রাণী পরীক্ষার নির্দেশিকা অনুসরণে বাংলাদেশের নীতি এখনও পিছিয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে নীতিমালার সমন্বয় বাংলাদেশের গবেষণার গুণমান এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বৃদ্ধি করতে পারে।

গবেষণায় প্রাণী ব্যবহারে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করতে পারে। এই মন্ত্রণালয়ের বন্যপ্রাণী ব্যবহার এবং সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিধিবিধান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রাণী সরবরাহের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণা এবং সংরক্ষণের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন।

এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও, প্রাণী পরীক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা সীমিত। এই ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের নীতি শক্তিশালী করা প্রয়োজন। নীতি সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রাণী-ভিত্তিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করা সম্ভব। নৈতিক বিবেচনা এবং বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে সুনির্দিষ্ট এবং সহজে বোধগম্য নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। প্রাণিভিত্তিক গবেষণার জন্য একটি ডেডিকেটেড জাতীয় নীতি তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে নৈতিক মান, অবকাঠামোগত চাহিদা এবং তহবিলের অগ্রাধিকার স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। ডব্লিউএইচও এবং ওইসিডি-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করে নীতিমালার আধুনিকীকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতি স্থাপন করা জরুরি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করে একটি সুসংহত নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন।

কিছু উদ্যোগ: আশার আলো

গবেষণায় ব্যবহার উপযোগী প্রাণীর জোগান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। আর সেগুলো হলো প্রাণী প্রজননকেন্দ্র স্থাপন, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ও পশু চিকিৎসা পলিক্লিনিক।

প্রথমত, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য উপযুক্ত প্রাণী প্রজননকেন্দ্র স্থাপনের প্রচেষ্টা চলছে, যদিও এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্রীয় গবাদিপশু প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের মতো প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান। এছাড়াও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের  মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাণী প্রজনন গবেষণা ও শিক্ষায় নিয়োজিত। এই উদ্যোগগুলো স্থানীয়ভাবে গবেষণার জন্য প্রাণীর সরবরাহ বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রাণী পরিচালনা এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার জন্য পঅ্যাশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে  প্রাণী কল্যাণ কোর্স চালু করা হয়েছে, এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে প্রাণী কল্যাণ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য এই ধরনের প্রশিক্ষণ উদ্যোগ আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি এবং গবেষণা সংস্থার সাথে অংশীদারিত্বের সুযোগ রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলের সাফল্যের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রাণী গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেল প্রয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। গবাদি পশু খাত সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পিপিপি উদ্যোগ বিদ্যমান, যা প্রাণী গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনেও অনুসরণ করা যেতে পারে।

পশুচিকিৎসা কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রাণীর স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ পরোক্ষভাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সহায়ক। প্রাণীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা গবেষণার জন্য উপযুক্ত প্রাণী সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

সুপরিকল্পিত রূপান্তর দরকার

বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল গবেষণা বাড়াতে জরুরি নীতিমালার সংস্কার, প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের সম্প্রসারণ, দক্ষতা উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড গ্রহণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, বিকল্প পদ্ধতির প্রচলন, অর্থায়ন বৃদ্ধি। আর এজন্য প্রথমেই গবেষণার জন্য প্রাণী ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট এবং সহজবোধ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি, যা নৈতিকতা ও বৈজ্ঞানিক চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করবে। প্রাণীভিত্তিক গবেষণার জন্য একটি স্বতন্ত্র জাতীয় নীতি তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে নৈতিক মান, অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয়তা এবং তহবিলের অগ্রাধিকার স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করে পরীক্ষাগারের মান উন্নয়ন করা উচিত। স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করে একটি সুসংহত নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নে দেশব্যাপী আধুনিক প্রাণী প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণ অপরিহার্য। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর পর্যাপ্ত এবং মানসম্পন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এসব প্রাণী লালন-পালন ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে বিশেষায়িত কোর্স চালু করা উচিত। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা যেতে পারে। প্রাণী গবেষণায় নিয়োজিত কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রাণী পরীক্ষাগারের মান উন্নয়নে ডব্লিউএইচও, ওইসিডি-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক করা উচিত। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রোটোকল এবং মানদণ্ড মেনে চলা গবেষণার গুণমান এবং গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে। শুধু তাই নয়, প্রাণী পরীক্ষার গুরুত্ব এবং নৈতিকতা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতি এবং গবেষণার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।

এছাড়াও আমাদের সন্ধান করতে হবে বিকল্প পদ্ধতিরও। কম্পিউটার মডেলিং, ইন-ভিট্রো টেস্টিং এবং অন্যান্য বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহার বাড়িয়ে প্রাণী পরীক্ষার ওপর নির্ভরতা কমানো উচিত। বিকল্প পরীক্ষা পদ্ধতির গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রাণী গবেষণায় সরকারি এবং আন্তর্জাতিক তহবিল বৃদ্ধি করা অত্যাবশ্যক। গবেষণা অবকাঠামো, প্রজনন কেন্দ্র এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাপী মডেল থেকে শিক্ষা

বাংলাদেশ তার আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে। ভারতের শক্তিশালী প্রজনন অবকাঠামো এবং স্পষ্ট নিয়ন্ত্রক কাঠামো এটিকে প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছে। চীনের অও-চালিত বিকল্পে বিনিয়োগ প্রাণী ব্যবহার কমিয়েছে এবং নির্ভুলতা বাড়িয়েছে। এই মডেলগুলোকে তার প্রেক্ষাপটে অভিযোজিত করে, বাংলাদেশ বর্তমান সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রম করতে পারে। সরকার, একাডেমিয়া, এনজিও এবং ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প খাতকে একযোগে সমন্বিতভাবে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত সম্প্রতি নিউ ড্রাগস অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রুলস (২০২৩) সংশোধন করে ওষুধ উদ্ভাবনে প্রাণী পরীক্ষার আবশ্যকতা নিশ্চিত করেছে। মানব-সংশ্লিষ্ট বিকল্প পদ্ধতিকে উৎসাহিত করেছে। ভারত প্রি-ক্লিনিক্যাল হিউম্যান মডেলের উন্নয়ন ও ব্যবহারের জন্য একটি ‘সেন্টার ফর এক্সিলেন্স’ স্থাপন করেছে। এছাড়াও ভারত প্রসাধনী এবং প্রাণী-পরীক্ষিত প্রসাধনীর আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বাংলাদেশের উচিত ভারতের এই পদক্ষেপ থেকে শিক্ষা নিয়ে বিকল্প পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো সংস্কারের ক্ষেত্রে সক্রিয় হওয়া।

অন্যদিকে চীন ২০২২ সালে পরীক্ষাগারের প্রাণীদের কল্যাণের জন্য প্রথম জাতীয় মানদণ্ড প্রয়োগ করেছে। চীন তার প্রাণী কল্যাণ নীতিতে প্রতিস্থাপন, হ্রাস, পরিমার্জন, দায়িত্ব এর উপর জোর দিয়েছে। চীন প্রসাধনী উপাদানের নিরাপত্তা মূল্যায়নের জন্য কিছু ইন ভিট্রো পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের উচিত চীনের কাছ থেকে পরীক্ষাগারের প্রাণীদের কল্যাণের জন্য জাতীয় মানদণ্ড তৈরি এবং নৈতিক তদারকি জোরদার করার বিষয়ে ধারণা নেওয়া। তবে, চীনের ব্যবস্থায় বিদ্যমান ফাঁকফোকর এবং প্রয়োগের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে।

গবেষণা ও প্রাণী কল্যাণে নৈতিক ভারসাম্য

প্রাণী পরীক্ষা সংক্রান্ত নৈতিক বিতর্ক বিদ্যমান। প্রাণী অধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ এবং নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে এর বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনীয়তা উভয়ই স্বীকৃত। প্রাণী গবেষণায় সর্বোচ্চ নৈতিক মান অনুসরণ করা এবং প্রাণীদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যাবশ্যক। প্রতিস্থাপন, হ্রাস, পরিমার্জন নীতি প্রাণী গবেষণার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত কাঠামো। বাংলাদেশে প্রাণিভিত্তিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সকল ক্ষেত্রে এই নীতি বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সকল প্রাণী গবেষণা প্রোটোকল পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য নৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত স্বাধীন নীতিশাস্ত্র কমিটি গঠন করা উচিত।

গবেষণায় প্রাণীদের ব্যবহার এবং প্রতিটি গবেষণায় ব্যবহৃত প্রাণীর প্রজাতি ও সংখ্যার যৌক্তিকতা সম্পর্কে স্বচ্ছ প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত। একটি শক্তিশালী নৈতিক কাঠামো কেবল নৈতিকভাবে অপরিহার্য নয়, বরং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জনগণের আস্থা তৈরি করার জন্যও অত্যাবশ্যক।

একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ

একটি শক্তিশালী প্রাণিভিত্তিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইকোসিস্টেম বাংলাদেশের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সুবিধা বয়ে আনতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ। স্থানীয় গবেষণা সক্ষমতা জোরদার করার মাধ্যমে দেশীয় ওষুধ শিল্পের বিকাশ সম্ভব, যা আমদানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করবে এবং রফতানির সুযোগ তৈরি করবে। গবেষণা এবং ওষুধ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। একটি শক্তিশালী ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইকোসিস্টেম দ্রুত ওষুধ উদ্ভাবনের সময়সীমা এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। স্থানীয় গবেষণা সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে চিকিৎসা পর্যটনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে। প্রাণিভিত্তিক গবেষণা অবকাঠামো এবং দক্ষতায় বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জনস্বা স্থ্য উভয়ের জন্যই ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিকল্পের অনুসন্ধান

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিকল্প পরীক্ষা পদ্ধতি, যেমন- ইন ভিট্রো সেল কালচার, কম্পিউটার মডেলিং এবং অর্গান-অন-এ-চিপ প্রযুক্তির গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলোর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কম খরচ, দ্রুত সময়সীমা এবং কিছু ক্ষেত্রে মানব-সংশ্লিষ্ট ডেটা।

তবে, জীবন্ত প্রাণীর জটিলতা সম্পূর্ণরূপে অনুকরণে বর্তমান বিকল্প পদ্ধতিগুলোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরও গবেষণা ও যাচাইকরণের প্রয়োজন। সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে, বিকল্প পদ্ধতিগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত, প্রাথমিকভাবে সেই ক্ষেত্রগুলোতে মনোযোগ দেওয়া উচিত যেখানে তাদের বৈধতা এবং নির্ভরযোগ্যতা আন্তর্জাতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রাণী পরীক্ষার ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং বৈশ্বিক প্রবণতার সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশে বিকল্প পরীক্ষা পদ্ধতির গবেষণা ও উন্নয়নে কৌশলগত বিনিয়োগ করা উচিত।

উপসংহার

বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল গবেষণাকেন্দ্র হওয়ার পথে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাণী সরবরাহের চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা অসম্ভব নয়। স্পষ্ট নীতি প্রয়োগ, অবকাঠামো বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশ তার গবেষণা পরিবেশকে রূপান্তর করতে পারে। এটি শুধু বৈজ্ঞানিক চাহিদা পূরণের বিষয় নয়; এটি নৈতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমাধানে অবদান নিশ্চিত করার বিষয়। বাংলাদেশ যদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণায় আঞ্চলিক নেতা হতে চায়, তাহলে প্রাণিভিত্তিক গবেষণার কাঠামোগত ও নীতিগত সংস্কার জরুরি। বিজ্ঞান, নৈতিকতা এবং জনস্বার্থ- এই তিনটির ভারসাম্য রক্ষা করেই গঠিত হতে হবে একবিংশ শতাব্দীর জন্য উপযোগী গবেষণা কাঠামো। ইতোমধ্যে গৃহীত ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রসারিত করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ এই খাতে বৈশ্বিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করতে পারবে। নীতি নির্ধারক, গবেষক, তহবিল সরবরাহকারী সংস্থা এবং জনসাধারণ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। একটি শক্তিশালী এবং নৈতিক প্রাক-ক্লিনিক্যাল গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, যা কেবল জাতীয় স্বাস্থ্য অগ্রগতিতেই অবদান রাখবে না, বরং বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকেও সমৃদ্ধ করবে।

লেখক: সিনিয়র লেকচারার, মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)।