ব্যতিব্যস্ত প্রিন্সিপাল তাকে জাগাননি, তবে তিনি ওঠার পর অনুযোগ করলে, ফজলুল হক তার হাত ধরে বলেছিলেন ‘এ কি প্রিন্সিপাল সাহেব, আমারই লজ্জিত হওয়ার কথা। আপনার অতিথি হয়ে এতরাতে ফেরা ঠিক হয়নি’। এই ঘটনার সঙ্গে তুলনা করার মতো বর্তমানের উদাহরণ আছে কিনা সন্দেহ। সেকালে রাজনীতিবিদরা সত্যিই নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতেন। তাই সংসদ সদস্যদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাবটি যতটা না খটকা লেগেছে, তার চেয়ে বেশি বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়েছে এর যৌক্তিকতা দেখে। খবরে প্রকাশ, প্রস্তাবিত ভাতাবৃদ্ধি সংসদ সদস্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। বলা হয়েছে, আজকাল সংসদীয় এলাকাবাসীর পেছনে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়, তাই ভাতা বাড়ানো প্রয়োজন। সবিনয়ে প্রশ্ন থাকে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অহেতুক আপ্যায়নব্যয় রাষ্ট্র কেন বহন করবে? রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করবেন নিজ অথবা দলের টাকায়, এটাই স্বাভাবিক। কারণ তারা সবসময় বলে আসছেন, তাদের রাজনীতি দেশ ও দশের জন্য।
কোটি-কোটি টাকা দিয়ে নিজের ব্যবহারে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির অনুমতি তারা পাবেন, অর্থাৎ সরকারের রাজস্ব আয় কমলো, কিন্তু ভাতা বাড়াতে হবে। বলা বাহুল্য, ওই গাড়ির বাড়তি সুবিধে হলো ট্রাফিক আইন অমান্য করে উল্টো রাস্তা দিয়ে চলার স্বাধীনতা, আবার আইন ভঙ্গকারীদের যথাযথ শাস্তি দাবি করা। ‘কি বিচিত্র এই দেশ!’ প্রশ্ন তোলার কেউ নেই। তার উত্তর জানার কৌতূহল রয়েই যাবে। যুক্তরাজ্যে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন মন্ত্রীদের সাফ বলে দিয়েছেন, তাদের গাড়ির চালকদের বেতন সরকার দেবে না। ক্যামেরন নিজে ট্রেনে করে লম্বা জার্নি শেষে সভায় উপস্থিত হন।
আমাদের কয়জন সংসদ সদস্য বাস, মিনিবাস, টেম্পো বা লেগুনাতে চড়েন? তাহলে কী করে বুঝবেন সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভোগ? সম্প্রতি পার হলো আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা মহিউদ্দিন আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী। তা নিয়ে বড়সড়ো স্মরণসভা হয়েছে বলে জানা যায়নি। যারা কাছ থেকে দেখেছেন তাকে, তারা জানেন যতদিন সংসদ সদস্য ছিলেন, ততদিন রিকশায় চেপে সংসদে যেতেন। জানা নেই, আজকের কয়জন সংসদ সদস্য গাড়ি ছাড়া চলাচল করেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, সদস্য, ওয়ার্ড, কমিশনার হওয়ার আগে করা অঙ্গীকার কতটুকু তারা পূরণ করেছেন, জানার কৌতূহল জাগে।
নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ভোটাররা বলে থাকেন ‘সৎ, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব, যিনি এলাকার উন্নয়ন করবেন’। অঙ্গীকারের যেমন তালিকা পাওয়া যাবে না, তেমনি অঙ্গীকার পূরণে, ভোটারের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে কেন জানি কেউ প্রশ্ন তোলেন না।