বরাদ্দের চাল না পাওয়ায় হতাশ পটুয়াখালীর জেলেরা

নদীর পারে পড়ে থাকা বেকার জেলে নৌকাসরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলেও পুনর্বাসনের চাল পাননি পটুয়াখালীর অর্ধলক্ষাধিক নিবন্ধিত জেলে পরিবার। ফলে অর্ধাহারে হতাশার মধ্যেই দিন কাটছে তাদের।

এদিকে, সহায়তা না পেয়ে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ইলিশ ধরতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জেল জরিমানার শিকার হতে হচ্ছে জেলেদের।

জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার পর জেলার ৩২ জেলে ও ব্যবসায়ীকে জেল ও জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদের মধ্যে ১৫ জনকে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং বাকিদের অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জব্দ কর হয়েছ নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ইলিশ ধরার সরঞ্জাম, ট্রলার ও নৌকা।

নিষেধাজ্ঞাকালীন জন প্রতি ২০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও পাননি জেলেরা। বরাদ্দকৃত চাল না পাওয়া এবং নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ ধরতে যাওয়ায় শাস্তি হওয়ায় হতাশ জেলেরা।

কুয়াকাটার কলাপাড়ার মহিপুর এলাকার জেলে মো. শহিদুল ইসলাম অভিযোগ, ‘গত ১২ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ। এক সপ্তাহ পার হলেও আমরা সহায়তা (চাল) পায়নি। অন্যদিকে মাছও ধরতেও যেতে পারছি না। গেলেই জেল-জরিমানা হচ্ছে। তাই আয় না থাকায় অর্ধাহারেই থাকতে হচ্ছে।’

বাউফল এলাকার জেলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সহায়তা না পাওয়ায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়। পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে দিন পার করতে হচ্ছে। সরকারের বরাদ্দকৃত চাল যাতে দ্রুত দেওয়া হয় প্রশাসন সেই ব্যবস্থা নিক।’

মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৯৭ বার ইলিশ রক্ষায় নদ-নদী, মৎস্য বন্দর ও বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলে ও ব্যবসায়ীদের আটক করে ৪৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ১৫টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, ১৩৫টি মাছঘাট, ৩২৮টি আড়ৎ, ১৮৩টি বাজার পরিদর্শন করে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় জড়িতদের আটকসহ তাদের কাছ থেকে ১০৭ মন মা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে ৩০টি। মোট ৪৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার মিটার যার মূল্য ৬২ লাখ টাকা।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, ‘ইলিশ রক্ষায় আমরা তৎপর রয়েছি, যাতে নিষিদ্ধ সময়ে জেলেরা নদীতে জাল ফেলতে না পারে।’

বাউফল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, ‘এ পর্যন্ত ১৩ জন জেলেকে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ জেলে ও বিক্রেতাকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. ইকবাল হোসেন জানান, ‘প্রজনন মৌসুম মা ইলিশ রক্ষায় জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌবাহীনি ও জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। গত বছর নিষেধাজ্ঞা ১৫ দিন থাকলেও ইলিশ প্রজনন আগে ও পরে হওয়ার কারণে এবার তা বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পটুয়াখালীতে প্রায় ৬২ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তাদের জন্য ৯১৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অবরোধের সময়ে জন প্রতি ২০ কেজি চাল কিছুদিনের মধ্যেই বণ্টন করা হবে।’

/এসএনএইচ/