আনন্দ বাজার গ্রামের দরিদ্র কৃষক তাজুল আলমের সাত সন্তানের পঞ্চম সন্তান নিহত জেএমবি সদস্য সাদ্দাম হোসেন। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) গভীর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সাদ্দাম নিহত হলেও তার পরিবারের কাছে খবর পৌঁছে শুক্রবার দুপুরে।
সাদ্দামের পরিবার জানায়, শুক্রবার দুপুরে সাদ্দামের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকের কাছে প্রথম ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শোনেন তারা। তবে ওই সাংবাদিকের কাছে দেখা ছবি সাদ্দামের না হওয়ায় তারা সাদ্দামের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। এ খবর নিশ্চিত হতে সাদ্দামের বাবা তাজুল আলম বাড়ি থেকে রংপুরের কাউনিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন টিভিতে ছেলের ছবি দেখার জন্য।
সাদ্দামের মা সুফিয়া বেগম ও বড় ভাই মিজানুর রহমান দাবি করেন, গত বছর এপ্রিলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শ্বশুর বাড়ি থেকে সাদ্দামকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর থেকে তারা অনেক চেষ্টা করেও আর সাদ্দামের খোঁজ পাননি।
বড় ভাই মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাদ্দামকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার চার মাস পর সাদ্দামের স্ত্রী ফারজানা একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।’ তবে সাদ্দামের স্ত্রী ও পুত্র কোথায় এখন আছে তা জানাতে পারেননি মিজানুর।
সাদ্দামের মা সুফিয়া বেগম ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় ৯নং ওয়ার্ডের কমিশনার আনোয়ার হোসেনকে বারবার অনুরোধ করে বলতে থাকেন, ‘তুমি সরকারক কন লাশটা দেউক। বাবাক নিয়া আমি মাটি দেই।’ গ্রামবাসীও সরকারের কাছে অনুরোধ জানান সাদ্দামের লাশটা ফেরত দেওয়ার। তারা বলেন, ‘লাশটা দিলে ওর মা-বাবা তাও শ্যাষ বারের মতোন পোলাডারে দেখতে পাইব।’
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাদ্দাম হেসেনের জন্ম ১৯৯৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে। ছোটবেলা থেকেই গ্রামে শান্ত, মার্জিত ও ভদ্র ছেলে বলে পরিচিত ছিল সে। দাখিল ও আলিম পাস করার পর লালমনিরহাট সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হয়। প্রথম বর্ষ পরীক্ষা দিলেও দ্বিতীয় বর্ষ থেকে আর কলেজে উপস্থিত ছিল না সে। গত বছরের ২২ মার্চ কুড়িগ্রামে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী সে।
আরও পড়ুন-
পুলিশের কাছেই ছিলেন সাদ্দাম!
জঙ্গিদের অস্ত্রের অন্যতম জোগানদাতা ছিল সাদ্দাম
/টিআর/