জানা গেছে, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে গাঁদা ফুলের চাহিদা থাকে বেশি। এর সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলচাষিরা। বিশেষ করে উপজেলার ১২টি গ্রামের প্রায় আড়াইশ’ একর জমিতে এখন চাষ হচ্ছে গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপ ও গ্লাডিয়াসসহ নানান জাতের ফুল। এসব ফুল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ ও মালা গাঁথা থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত এই এলাকার নারীরা। এখানকার উৎপাদিত ফুল প্রতিদিন দূরপাল্লার পরিবহনে চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বড় শহরগুলোতে।
কালীগঞ্জ উপজেলার ডুমুরতলার চাষি মশিয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তার প্রায় ১ বিঘা জমিতে ফুল রয়েছে। এগুলো দড়িতে গেঁথে ঝোপা তৈরি করা হয়। এক ঝোপায় সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ গাঁদা ফুল থাকে। ফুলের দাম কম থাকলে এক ঝোপা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। দাম বাড়লে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা সম্ভব। সার, কিটনাশক ও পরিচর্যা খরচ বাদ দিয়ে এ বছর বিশেষ দিবসগুলোতে ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
ফুলনগরী হিসেবে খ্যাত বড়ঘিঘাটি গ্রামের ফুলকন্যা নাজমা, নূরজাহান, স্বরসতী ও আয়েশা বেগম জানান, বছরের ১২ মাসই ফুল তোলার কাজ করেন তারা। কিন্তু বিশেষ দিনগুলোকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়ে যায় তাদের। ফলে এ সময় উপার্জনও বেশি হয়। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এখন সকাল-বিকাল কাজ করতে হচ্ছে তাদের। ব্যাপারীরা ফুল সরবরাহের তাগাদা দিচ্ছেন প্রতিদিন। তাই সব ফেলে সারাদিন ফুল তুলছেন তারা।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ইমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় আড়াইশ’ একর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। এছাড়া জেলার প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদাসহ নানান জাতের ফুল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাঁদা ফুল চাষ হয় কামালহাট গ্রামে।
দেশের বিভিন্ন স্থানের আড়তে ফুল পাঠাতে আসা একাধিক চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাবছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে প্রতি বছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভালোবাসা দিবসে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও পাওয়া যায় ভালো। ফুলচাষিরা সারাবছর চুক্তি মোতাবেক তাদের ক্ষেতের ফুল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় শহরগুলোর ফুলের আড়তে পাঠায়। এসব স্থানের আড়তদারেরা বিক্রির পর তাদের কমিশন রেখে টাকা পাঠিয়ে দেন।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ১৯৯১ সালে এ এলাকায় প্রথম ফুল চাষ করেন বালিয়াডাঙ্গার ছব্দুল শেখ। মূলত তখন থেকে এখানে ফুল চাষ বিস্তার লাভ করে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত কৃষকদের ফুল চাষ সম্পর্কে কার্যকরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সঠিক পদ্ধতিতে ফুল চাষের মাধ্যমে তারা লাভবান হচ্ছেন।’
/এমডিপি/জেএইচ/