কীর্তনখোলায় নৌ-দুর্ঘটনা: সক্ষমতা না থাকায় ফিরে গেছে উদ্ধারকারী জাহাজ

আংশিক ডুবে যাওয়া গ্রীন লাইন ২

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে দুর্ঘটনার শিকার জাহাজ দুটি উদ্ধার না করেই রবিবার ফিরে গেছে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক। শনিবার বিকালে কয়লাবাহী মাসুম-মামুন-১ কার্গোর সঙ্গে যাত্রীবাহী দিবা সার্ভিসের এমভি. গ্রীন লাইন-২ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ৫২৫ টন কয়লাসহ কার্গোটি ডুবে যায়। গ্রীন লাইন-২ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আংশিক ডুবে যায়।

বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের উপ-পরিচালক এবং নির্ভীক-এর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বলেন, উদ্ধারকারী জাহাজের ওজন উত্তোলনের ক্ষমতা ২৫০ টন। এমভি. গ্রীন লাইন-২ ও মাসুদ মামুন -১ কার্গোটির ওজন নির্ভীক-এর উত্তোলন ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি। তাই রবিবার বেলা ১২টার দিকে নির্ভীক ঘটনাস্থল থেকে ফিরে গেছে।

তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আমাদের বিকল্প কোনও চিন্তাভাবনার সুযোগ নেই। মালিকরা বিকল্প পদ্ধতিতে জাহাজ দুটি উদ্ধার করার চেষ্টা করছেন।

এ ব্যাপারে এমভি গ্রীন লাইন-২ এর কর্তৃপক্ষ জানান,  তারা নিজস্ব ব্যবস্থায় পাম্প দিয়ে পানি বের করে, অন্য নৌযান দিয়ে চর থেকে এমভি গ্রীন লাইন-২ টেনে নামাবেন।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠুও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, উভয় জাহাজের উদ্ধারকাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তল্লাশি চালিয়ে নদীর যে অংশে কার্গোটি ডুবে গেছে, সে জায়গা সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।  কয়লা বোঝাই কার্গোটি নদীর ৩০ ফুট গভীরে আছে। কারও অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারও অবহেলা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে, নৌ-দুর্ঘটনার বিষয়ে এখনও কোনও মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌ-পুলিশের নৌ-বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, তারা রাতেই ঘটনাস্থল এড়িয়ে নিরাপদে নৌ-চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন।

গ্রীন লাইন ওয়াটার ওয়েজের ঢাকা ঘাটের সুপারভাইজার ওয়ালিউল্লাহ জানান, তাদের ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা নিয়মিত দিবা সার্ভিস চালু রয়েছে। রবিবার সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে ১৬৫ জন যাত্রী নিয়ে এমভি. গ্রীন লাইন-৩ বরিশাল পৌঁছে প্রায় সমসংখ্যক যাত্রী নিয়ে বিকাল ৩টায় বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।

গ্রীন লাইন ওয়াটার ওয়েজের জেনারেল ম্যানেজার আ. ছত্তার জানান, তাদের কোম্পানির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। উদ্ধারকারী জাহাজের অপেক্ষায় থেকে তাদের জাহাজের ভেতরে আরও বেশি পানি ঢুকে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

অপরদিকে, কার্গো কর্তৃপক্ষের সদস্যরা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখলেও সেটি উত্তোলনের কোনও সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামান জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাকির হোসেনের নেতৃত্বে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশের প্রতিনিধি, বিআইডব্লিউটিএ’র একজন প্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিসের একজন প্রতিনিধিসহ ৫ জনকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামান জানান, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেওয়াসহ দুর্ঘটনার কারণ, কারও অবহেলা ছিল কিনা, আগামীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কী করণীয় হবে, সে সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন।

/জেবি/এমএ/