আছে ইলিশ, নেই ইলিশ

ইব্রাহিম রনিদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইলিশ মাছ। আর সেই ইলিশের রাজধানী হচ্ছে চাঁদপুর। বর্তমানে এ জেলা শহরকে বলা হচ্ছে ‘সিটি অব হিলশা’। এ জেলার প্রতিনিধি হওয়ায় আমাকে বাংলা ট্রিবিউনে ইলিশ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মাঝে মাঝেই করতে হয়। এমনই একটি প্রতিবেদন করে গত বছরের মে মাসে বাংলা ট্রিবিউনের সারাদেশ ক্যাটাগরিতে সেরা প্রতিবেদক হওয়ার গৌরব অর্জন করি। সেই প্রতিবেদনের পেছনের কথা নিয়েই এই লেখা।
২০১৬ সালে ইলিশ নিয়ে আমি বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন করেছি বাংলা ট্রিবিউনে। তবে গত বছরের ১৬ মে ‘নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে, ইলিশের হদিস নেই’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিকে ওই মাসের সারাদেশ ক্যাটাগরিতে সেরা প্রতিবেদন হিসেবে নির্বাচিত করে বাংলা ট্রিবিউন। এজন্য বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেলসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।
ইলিশযদ্দূর মনে পড়ে, ওই সিজনে ইলিশের ওপর এ ধরনের প্রতিবেদন বাংলা ট্রিবিউনই প্রথম ছেপেছিল। ইলিশ নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে একটি রাত নির্ঘুম কাটিয়েছিলাম। প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য এর কয়েকদিন আগে ভোর ৪টার দিকে কোস্টগার্ডের স্পিডবোটে চেপে নদী চষে বেড়িয়েছি। নদীতে টানা ৩ ঘণ্টা ঘুরে কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলি বাস্তব পরিস্থিতি জানার জন্য। এর দু’দিন পর মাছ কিনতে গেলাম হরিণা ফেরিঘাট। দেখলাম, দাম বেশি, কারণ মাছ ধরা পড়ছে একেবারেই কম। পরে আখনের হাট ঘুরে শূন্য হাতে আসি দেশের ইলিশের সবচেয়ে বড় আড়ত চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে। সেখানেও গিয়ে দেখি সব ফাঁকা। ইলিশ নেই, নেই হাঁকডাকও। আড়তদার, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, মাছের সংকটের কথা। তখনই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন করার জন্য ছবি ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করি।
অন্যান্য বছর মে মাসে মাছ ভালোই পেত জেলেরা। ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় দু’মাস মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার কারণে নদীতে নামেনি অধিকাংশ জেলে। এরপর যখন নদীতে নেমে মাছ পাচ্ছিল না, তখন তাদের মাঝে বেশ হতাশাই দেখা দেয়। কারণ, প্রতিটি নৌকায় ১০-১৫ জন জেলের খরচ, আছে নৌকার তেল খরচ। মাথার ওপর দাদনদারের ঋণের বোঝাসহ নানা খরচ।
ইলিশের বাজারএ সংকটের কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমেই চলে আসে জলবায়ু পরিবর্তন, নদীদূষণ, নদীর বিভিন্ন এলাকায় চর-ডুবোচরের কথা। এছাড়া কারেন্ট জাল ব্যবহার, নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের অসচেতনতায় মা ইলিশ ও জাটকা নিধন, অসহায় জেলেদের সরকারি সহায়তার অপ্রতুলতাসহ কিছু সমস্যা তো আছেই।
এ প্রতিবেদনটির কাজ করতে গিয়ে ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানিয়েছিলেন, ‘দেরি হচ্ছে কিন্তু চিন্তার কিছু নেই। মাছ পাওয়া যাবে।’ এ প্রতিবেদনটি প্রকাশের মাসখানেক পর থেকেই মাছ পেতে শুরু করেন জেলেরা। সেপ্টেম্বরের পর থেকে ব্যাপক হারে ইলিশ ধরা পড়ে।
ব্যবসায়ী ও জেলেদের ভাষ্যমতে, গত বছর আহরিত ইলিশের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত বছর রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ প্রাপ্তির প্রধান কারণ ছিল, জাটকা সংরক্ষণে জেলা প্রশাসকসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ। শুরুতে সমস্যায় পড়লেও যার সুফল পওে পেয়েছে জেলেরাও।
বাংলা ট্রিবিউনের জন্মদিনে পাঠক, শুভানুধ্যায়ীসহ সবাইকে শুভেচ্ছা।