সর্বশেষ আমরা গিয়েছিলাম মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গি সদস্য লোকমান আলীর বাড়িতে। ওই বোমা বিস্ফোরণে তিনিসহ মারা গিয়েছিলো তার স্ত্রী ও ৫ মেয়ে। লোকমানের বাড়ি ঘোড়াঘাটের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে কান্নার রোল থাকলেও পরিবারের সদস্যদের সাফ কথা, জঙ্গির লাশ তারা নেবেন না। পরের দিন তারা মৌলভীবাজারে গিয়েছিলেন তবে লাশ গ্রহণ করেননি।
এর আগে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকার কল্যাণপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় জঙ্গি সদস্য আব্দুল্লাহ। তার বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ভল্লবপুর গ্রামে। সেখানে গিয়েছিলাম সংবাদ সংগ্রহ করতে। আব্দুল্লাহর মা মোসলেমা বেগম সংবাদকর্মীদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘যে সন্তান ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ খুন করতে পারে তার লাশ দাফন তো দূরের কথা, এমন সন্তানের মুখ পর্যন্ত দেখতে চান না তিনি।’
সাম্প্রতিক সময়ে জেএমবি’র উত্থানের ঘটনার পরপরই দিনাজপুরে বেশ কিছু সফল অভিযান পরিচালনা করেছে র্যা ব, ডিবি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে অনেক জেএমবি সদস্যকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১১ এপ্রিল ও ১২ এপ্রিল নব্য জেএমবি’র উপদেষ্টা রিয়াজুল ইসলামসহ তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়।
এছাড়া, ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর জেএমবি সদস্যদের গুলিতে আহত হন ইতালীয় নাগরিক ও ধর্মযাজক ডা. পিয়েরো পারোলারি। ইতালীয় নাগরিককে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর গত ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সনাতন ধর্মালম্বীদের ইসকন মন্দির কমিটির সভাপতি ডা. বীরেন্দ্রনাথ রায়কে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এর মাত্র ৪ দিনের মাথায় ৪ ডিসেম্বর রাতে কান্তজিউ মন্দিরের রাস মেলায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। এই ঘটনার সপ্তাহ না পেরুতেই গত ১০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার ডাবোর ইউনিয়নের জয়নন্দবাজারের পাশে ডহচি জগন্নাথ মন্দির ও ইসকন মন্দিরে ধর্মসভা চলাকালীন ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে দু’জন আহত হয়। পরে এলাকাবাসী ধাওয়া দিয়ে শরিফুল ইসলাম ও মোসাব্বিরুল হক নামে ২ জেএমবি সদস্যকে আটক করে।
দিনাজপুর জেলায় জেএমবির নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ২০০১ সাল থেকে। ওই বছরের ২০ মে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় ২৫টি পেট্রোল বোমা, কাগজপত্রসহ আট সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টায় দিনাজপুর জেলার কালুরমোড় ছোটগুড়গোলায় একটি ছাত্রাবাসে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থল থেকে জেএমবির তিন সক্রিয় সদস্যকে আহত অবস্থায় আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে অনেক জেএমবি সদস্য। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক তৎপর।