মংলা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, লবণ পানি অধ্যুষিত মংলাসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় দুই যুগ আগ থেকে ধানের পরিবর্তে বছরের প্রায় আট মাসই বাগদা চিংড়ির চাষ হয়ে আসছে। মংলা উপজেলার ১২ হাজার পাঁচশ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ১০ হাজার আটশ ৫৮ হেক্টর জমিতেই বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়ে থাকে। এসব জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ঘেরের সংখ্যা হচ্ছে পাঁচ হাজার পাঁচশ ৫০টি। গত বছর এই এলাকায় বাগদা উৎপাদিত হয়েছিল চার হাজার ৪১ মেট্রিক টন। মড়কের কারণে এবারে সেই উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় চিংড়ি চাষিদের।
মংলা উপজেলার চাঁদপাই গ্রামের চিংড়ি চাষি মো. আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে ঘেরে পোনা মাছ ছাড়ার পর মে মাস থেকে বিরতিহীনভাবে মাছ মরছে। হোয়াইট স্পট ভাইরাসের কারণে ঘেরে ভেসে উঠছে মরা মাছ। ঘেরের ভেড়ীর পাশে মরা মাছ লালচে আকার ধারণ করে পড়ে থাকছে। আবার যে সামান্য পরিমাণ জীবিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তার অধিকাংশই দুর্বল। এগুলো নড়াচড়া করতে না পেরে মাটির সঙ্গে মিশে থাকছে।’ বর্তমান পূর্ণিমার পক্ষে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ঘেরই মাছশূন্য হয়ে পড়েছে।’
সুন্দরবন ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দিয়ার খণ্ড এলাকায় শতাধিক বিঘা জমি লিজ নিয়েছিলাম বাগদা চাষের জন্য। লগ্নি করেছি প্রায় ১৭ লাখ টাকা। চলতি মৌসুমের মাঝামঝি এ ঘের থেকে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার আশা ছিল, তাতে আমার লগ্নির বড় অংশই উঠে আসার কথা। কিন্তু মড়কের কারণে সব মাছ মরে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এক লাখ টাকার বেশি মাছ পাইনি ঘের থেকে।’
মড়কের কারণে উপজেলার চিংড়ির উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় চিংড়ি চাষি ও ডিপো মালিকরা। উপজেলা চিংড়ি বণিক সমবায় সমিতির নুরুল আফসার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবারে মড়কের কারণে মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আড়তগুলোতে চিংড়ির আনাগোনা প্রায় অর্ধেক।’
মংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদাউস আনসারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে বাগদা চিংড়ি মারা যায়। মৌসুমের শুরুতে ঘের তৈরির সময় চাষিরা ঘেরের মাটির সঠিক পরিচর্যা করেন না। জমির ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য যে পরিমাণ চুন ব্যবহার করার দরকার, তাও ঠিকমতো করেন না। এছাড়াও নিয়মিত ফরমুলেটেড খাদ্য সরবরাহ না করা, পানি পরিবর্তন ও বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা না করার কারণেও মাছ মারা যাচ্ছে।’
চিংড়ি চাষিদের সচেতনতা তৈরিতে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে উপজেলার এই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চিংড়ি চাষিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, সেমিনারের মাধ্যমে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া, কোনও এলাকায় মড়ক লাগার খবর পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই।’
আরও পড়ুন-