বছর ঘুরলেও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। হামলায় সরাসরি জড়িত সবাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হলেও পুলিশ এখন ছুটছে অস্ত্রদাতা, অর্থদাতা ও মদদদাতাদের সন্ধানে। এ ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, এর তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোর্শেদ জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এখনও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাই এ মামলার অভিযোগপত্র দিতে আরও সময় লাগবে। তবে তদন্তে অনেক অগ্রগতি রয়েছে।’
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে রাজিব গান্ধী। পুলিশের কাছে অস্ত্রদাতা, অর্থদাতা এবং হামলার নেপথ্যে আরও কারা ছিল তাদের নাম প্রকাশ করেছে সে। জিজ্ঞাসাবাদে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়া হামলায় নিজে জড়িত থাকাসহ আরও অনেকের নাম বলেছে রাজিব। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে সে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে কাদের নাম বা কত জনের নাম এসেছে তা জানাননি তদন্ত কর্মকর্তা মোর্শেদ জামান।
সূত্র জানায়, রংপুরে জাপানি নাগরিক ওসি কুনিও এবং ধর্মান্তরিত রহমত আলী, পঞ্চগড়ের যজ্ঞেশ্বর পুরোহিত, কুড়িগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী, গাইবান্ধার তরুণ দত্ত, দেবেশ ও ফজলে রাব্বী, টাঙ্গাইলের দর্জি নিখিল, পাবনার নিত্যানন্দ পাণ্ডব, নাটোরের সুনীল গোমেজ, কুষ্টিয়ার ডা. সানাউল, রাজশাহীর প্রফেসর রেজাউল ও ঢাকার সিজার তাবেলা হত্যাকাণ্ডসহ নব্য জেএমবির সদস্যরা সারাদেশে আর ২৪টি হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ওইসব হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল, তাদের মধ্য থেকে সাহসী ও হিংস্রদের হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়ায় হামলার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
শোলাকিয়া হামলা প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত রোজার ঈদের দিন পুলিশের ওপর সরাসরি হামলা চালায় দু’জন। কিন্তু পরিকল্পনায় ছিল পাঁচ জন। শোলাকিয়া হামলার মূল পরিকল্পনাকারী রাজীব গান্ধী। তার সঙ্গে তামিম চৌধুরী, মারজান, সারোয়ান জাহান মানিক ও মেজর জাহিদ মিলে হামলার ছক তৈরি করে। এরা সবাই নব্য জেএমবির সদস্য। বিপুলসংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটানোই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে তদন্ত কর্মকর্তার দাবি। শোলাকিয়া জামাতের ইমাম ফরিদউদ্দিন মাউসদকেও হত্যা করতে চেয়েছিল জঙ্গিরা। তবে হামলায় নিহত হন পুলিশ সদস্য আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম। এছাড়া দুই পক্ষের গোলাগুলির সময় নিহত হন ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামে এক নারী।
পুলিশ জানায়, হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ার পরিকল্পনা করা হয় একসঙ্গেই। এ নিয়ে জঙ্গিরা ঢাকায় দুই দফা বৈঠক করে। রাজীব গান্ধী হামলাকারীদের মধ্যে খায়রুল ইসলাম পায়েল বাঁধন, শরিফুল ইসলাম ডন, রোহান ইমতিয়াজ স্বপন ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলকে দুটি হামলার দায়িত্ব দেয়।
গত ঈদুল ফিতরে পুলিশের গুলিতে আহত হয় আরেক জঙ্গি শফিউল ইসলাম (ডন)। তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বছরের ৪ আগস্ট র্যা বের একটি দল ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ নিয়ে আসার পথে নান্দাইলে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র সময় শফিউল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। সে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে। তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে র্যা বের দলটি কিশোরগঞ্জে নিয়ে আসছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, এ মামলায় এখন রাজিব গান্ধী ছাড়াও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আনোয়ার হোসেন (৪৬) এবং কিশোরগঞ্জ শহরের জাহিদুল হক তানিম (২৫) কারাগারে রয়েছে।
/বিএল/টিআর/জেএইচ/