বেদনার ঈদ ৩০ পরিবারে

ভাঙচুর-লুটপাটের শিকার বাড়িগুলোর একটি (ছবি- ফরিদপুর প্রতিনিধি)

ঈদ এবার বেদনা নিয়ে হাজির হয়েছে মধুখালী উপজেলার কাড়েকদী ইউনিয়নের চরবাশপুর গ্রামের ৩০ পরিবারে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে স্থানীয় ঈদগাহের জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষের জেরে এসব পরিবারের বাড়িঘরে ভাঙচুর হয়েছে; লুটপাট হয়েছে স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য মালামাল।

অভিযোগ আছে, বর্তমান চেয়ারম্যানের ভয়ে ওইসব পরিবারের পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ নিয়ে কোনও প্রস্তুতিই নেই তাদের। হয়নি কেনাকাটাও। কেবল সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার আশায় প্রহর গুনছেন তারা।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (১৬ জুন) ঈদগাহের জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে কাড়েকদী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মুকুল হাসান ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আহম্মদ আলীর সমর্থকদের মধ্য সংঘর্ষ হয়। এরই জের ধরে মুকুলের লোকজন আহম্মদ আলীর ৩০ সমর্থকের বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। এসময় মুকুলের লোকজন ওইসব বাড়িঘরের স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্রসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়; বর্তমান চেয়ারম্যানের ভয়ে এখন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে বেরাচ্ছেন। এদিকে, বাড়িঘরে ভাঙচুর হওয়ায় ওই পরিবারগুলোর নারী ও শিশুরা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বয়স্কদের দাবি, ১৯৭১ সালের পর বাড়িঘরে এমন নৃশংসতা তারা আর দেখেননি।

শনিবার সরেজমিনে কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর বেশ ক’জন নারীর সঙ্গে। মিনা বেগম, নুরজাহান, ছবি বেগম ও বালী বেগম নামে চার নারী জানান, চেয়ারম্যান মুকুলের লোকজন তাদের প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে। এমনকি, ঈদের পর আগুনে পুড়িয়ে মারারও হুমকি দিচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশ (ছবি- ফরিদপুর প্রতিনিধি)

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন উপজলা চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান মোল্যা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম লুৎফুন নাহার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা দেখভালের আশ্বাস দেন। পরে আর তারা কোনও ধরনের খোঁজখবরই নেননি।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বর্তমান চেয়ারম্যান মুকুল হাসানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আহম্মদ আলী বলেন, ‘ঈদ্গার বিরোধপূর্ণ জায়গার বিএস রেকর্ডের কাগজপত্র আমার কাছে রয়েছে। তাও মুকুলের লোকজন আমাদের অত্যাচার করছে। মুকুল ও তার পক্ষের লোকজনের অত্যাচারে ৩০টি পরিবার খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ঈদ্গাহে তাদের ঈদ নামায আদায়ের অবস্থাও নেই। এ নিয়ে প্রশাসন কোনও সহযোগিতাও করছে না।’

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘সংঘর্ষের পর উভয়পক্ষ দু’টি মামলা করেছে। একপক্ষ চেয়ারম্যান মুকুলসহ ১৭ জনকে আসামি করে, অপর পক্ষ আহম্মদ আলীসহ ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারে, তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/টিএন/এমএ/