বাচ্চা দিয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের আরেকটি জিরাফ

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বিচরণ করছে মা ও বাচ্চা জিরাফবাচ্চা জন্ম দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি সাফারি পার্কের আরেকটি জিরাফ। ২৪ জুন সকালে পুরুষ বাচ্চাটির জন্ম দেয় জিরাফটি। বর্তমানে পার্কে জিরাফের (বাচ্চাসহ) সংখ্যা ১০টি।

গত ১৩ জুন অন্য একটি জিরাফ দুটি মাদি বাচ্চার জন্ম দেয়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ১৭ জুন জিরাফের বাচ্চাদুটি মারা যায়।

সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিসুর রহমান বলেন, ‘জন্ম নেওয়া শাবক ও তাদের মায়ের সুস্থতার জন্য জিরাফ বেস্টনি এলাকায় একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসকের অধীনে সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করা হচ্ছে। তাদের স্বাভাবিক খাবার গাজর, ছোলা, কলা, সবুজ ঘাস ও গমের ভূসি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন দেওয়া হচ্ছে। নতুন বাচ্চারা দিনভর মায়ের সঙ্গে জিরাফ বেস্টনিতে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে।’

পার্কে কর্মরত ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার মো.সরোয়ার হোসেন জানান, ‘৩/৫ বছর বয়সে জিরাফ প্রজননক্ষম হয়। ১৪/১৫ মাস গর্ভধারণ করে মা জিরাফ সাধারণত একটি বাচ্চা প্রসব করে। প্রতিটি জিরাফের গড় আয়ু প্রাকৃতিক পরিবেশে ২০/২৫ বছর এবং বেস্টনিযুক্ত পরিবেশে প্রায় ২৮ বছর। পূর্ণবয়স্ক জিরাফের গড় ওজন ১৬শ’ থেকে ২৪শ’ পাউন্ড এবং বাচ্চা জিরাফের গড় ওজন হয় ১০০/১১৫ পাউন্ড। পূর্ণবয়স্ক জিরাফের উচ্চতা ১৯ ফুট এবং তাদের জিহ্বার দৈর্ঘ্য আরও দুই ফুট। এরা উঁচুতে থাকা গাছের পাতা বা তৃণ লম্বা জিহ্বা ব্যবহার করে মুখে টেনে নিয়ে খায়। সাধারণত এরা পানি কম পান করে। পানি পান করার সময় সামনের পা দুটি ছড়িয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে পানি পান করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সাফারি পার্কে চার দফায় দক্ষিণ অফ্রিকা থেকে ১২টি জিরাফ আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে দু’টি এবং ২০১৭ সালের ১৭ মে দু’টিসহ মোট চারটি জিরাফ অসুস্থ হয়ে মারা যায়।১৩ জুন বাচ্চাটি হলো মাদি এবং সর্বশেষ ২৪ জুন জন্ম নেওয়া বাচ্চাটি পুরুষ। প্রসবের পর থেকে বাচ্চাদের নিয়ে মা জিরাফ দুটি বেস্টনিতে অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে চলাফেরা করছে। মা ও বাচ্চা জিরাফ সুস্থ রয়েছে। বাচ্চাগুলো কিছুক্ষণ পরপর মায়ের দুধ পান করছে এবং খেলা করছে। জিরাফের বাচ্চাদের মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার খেতে অভ্যাস করা হচ্ছে।’

বন্যপ্রাণি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন জানান, ‘জিরাফ সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে পছন্দ করে।’

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বিচরণ করছে মা ও বাচ্চা জিরাফদুটি বাচ্চা জিরাফের মৃত্যুর কারণ শনাক্ত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প পরিচালক সামসুল আজম জানান, ‘১৭ মে দুটি জিরাফ মারা যাওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসেবে ক্লস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সেন্ট্রাল ডিজিজ ইনভেস্টিগেশন ল্যাবরেটরি ওই তথ্য জানিয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের চিকিৎসক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া সাধারণত বৃষ্টির মধ্যে ও আর্দ্র মাটিতে বেশি বংশ বিস্তার করে। এরা তৃণভোজী প্রাণিদের বেশি আক্রমণ করে। এ জীবাণু আক্রমণের ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণিরা মারা যেতে পারে। সাপ, বেজী, পানি ইত্যাদির মাধ্যমে এ জীবাণু বিস্তার লাভ করতে পারে। তবে আগাম প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এদেরকে নটরিয়াস ব্যাকটেরিয়া বলা হয়।’

/এসএনএইচ/