ইউএনও’র বিরুদ্ধে মামলা: দায় এড়াচ্ছেন স্থানীয় আ. লীগ নেতারা

 

ইউএনও তারেক সালমনজাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিকৃত ছবি ব্যবহারের অভিযোগে আগৈলঝাড়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারেক সালমনের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এখন কোনও দায় নিতে চাচ্ছেন না। মামলার বাদী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার ও ঘটনায় সংশ্লিষ্টরা সমালোচনার মুখে পড়লে, প্রশাসন ও পুলিশের কাঁধে বন্দুক রেখে পার পেতে চাইছেন তারা।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এ ধরনের  কর্মকাণ্ড সার্পোট করে না। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। পুলিশ এই ঘটনায় বাড়াবাড়ি করেছে। তবে এটাও জেনেছি— জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনও এর আগে ইউএনও তারেক সালমনকে শোকজ করেছিল।’

বর্তমানে তারা এ ধরনের বক্তব্য দিলেও আইনজীবীসহ স্থানীয় অনেক নেতাই তখন প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষে ছিলেন। আদালতেও জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকে।

আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আনিসউদ্দীন শহীদ বলেন, ‘দলীয় নেতাদের নির্দেশেই জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক ও সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে জামিন বিরোধিতাকারীদের কাতারে শামিল হয়েছিলাম।’

আমন্ত্রণপত্রে ব্যবহার করা বঙ্গবন্ধুর ছবিটি এক শিশুর আঁকা এবং ওই ছবিটি পুরস্কৃত হয়েছিল। তাহলে ইউএনও কী করে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করলেন, এ প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রে ওই ছবিটি ব্যবহার করা হবে, উপজেলা প্রশাসনের এমন কোনও রেজ্যুলেশন আদালতে তাৎক্ষণিকভাবে দেখাতে পারেননি ইউএনও তারেক সালমন। এ ব্যাপারে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন তাকে শোকজও করেছিল। এমনকি পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার সংবাদ প্রকাশিত হলেও তার ব্যাখ্যা দেননি তিনি। মামলা করার পরও তিনি (ইউএনও) এ বিষয়ে গণমাধ্যমে তার বক্তব্য কিংবা প্রতিবাদও দেননি।’

জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশেই তিনি ইউএনওকে চিঠি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে ইউএনও’র জামিন নামঞ্জুরের কথা শুনে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জামিনযোগ্য ধারায় জামিন না হওয়ার ব্যাপারে তিনিও বিস্মিত হয়েছিলেন।’

এসব বিষয়ে গাজী তারেক সালমন বলেন, ‘আমার ওপর যা হয়েছে, তার জন্য যারা দায়ী তাদের আমি শাস্তি দাবি করছি। একটি জামিনযোগ্য ধারায় দায়ের করা মামলায় সংসদ সদস্যসহ প্রায় অর্ধশত আইনজীবী আমাকে জামিন না দেওয়ার জন্য বিচারকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন বলে আমার মনে হয়েছে।’

উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিকৃত ছবি ব্যবহারের অভিযোগে আগৈলঝাড়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু।

ওই মামলায় গত ১৯ জুলাই ইউএনওকে প্রথমে জামিন না দিয়ে দুই ঘণ্টার জন্য জেল হাজতে রাখা হয়। পরে তার জামিন হলেও পুলিশ, বিচারক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সমালোচনার মুখে পড়েন। এরপর আওয়ামী লীগ থেকে সাজুকে  সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

/এসএমএ/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন: 

ইউএনও’র বিরুদ্ধে মামলা: পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি