গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের তিলকপাড়া গ্রাম। প্রত্যন্ত এ গ্রামের মুনছুর আলীর স্ত্রী সালেহা বেগম (৫২)।তিন মাস আগে হঠাৎ করে তার হাত-পা অবশ (প্যারালাইসিস)হয়ে যায়। সরেজমিনে গিয়ে মুনছুর আলীর বাড়িতে নাচ-গানের আসর দেখা যায়। জানা গেল,মুনছুর আলীর অসুস্থ স্ত্রী সালেহা বেগমের চিকিৎসা চলছে।
ভেতরে চলছে খঞ্জনি, দোতরা আর ঢোল-ঢাকের বাজনা। এসব বাজনার সঙ্গে কবিরাজ নিজেই চারপাশে ঘুরছেন। একটু পরপর রোগীর হাত-পায়ে তেল মালিশ ও ঝাড়ু দিয়ে আঁচড় (স্পর্শ) করেই নাকি রোগ সাড়াচ্ছেন কবিরাজ। এসব চিকিৎসার জন্য কবিরাজ রোগীর স্বজনদের সঙ্গে মোটা অংকের টাকায় আগেই চুক্তিবদ্ধ হন। টাকা হাতে পেলেই কবিরাজ শুরু করেন তার চিকিৎসা কার্যক্রম। তবে ঢাক-ঢোল আর গানের শব্দে কখনও কখনও রোগী নিজেই চিৎকার করে উঠছেন। তারপরেও চলছে চিকিৎসা।
তিলপাড়া গ্রামের হুমায়ুন কবীর জানান, এভাবে চিকিৎসা ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। এ কাজে বাধা দিলে রোগীর স্বজনরা উল্টো তাদের হুমকি দেন।
মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনারুল ইসলাম জানান, মানুষের মধ্যে এখনও সেই পুরনো আমলের ধ্যান-ধারণা রয়েছে। এসব ধ্যান-ধারণার কারণে তারা তেল মালিশ ও ঝাড়-ফুঁকে বিশ্বাসী। এমন চিকিৎসা একটি ভণ্ডামি ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। তবে এমন অপচিকিৎসায় বাঁধা দিলেও উল্টো তাদের হুমকির মধ্যে পড়তে হয়। এ কারণে তারা অনেকটাই অসহায়।
এ বিষয়ে সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর মেডিক্যাল অফিসার ডা. মারদিয়া সারাহ বলেন, ‘আধুনিক যুগেও গ্রামগঞ্জের এমন অপচিকিৎসার পেছনে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কারও রোগ হলে প্রথমেই তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রোগ শনাক্ত করতে হবে। তা না হলে এসব অপচিকিৎসার কারণে রোগী আরও জটিল রোগে ভুগবেন। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহলের সহায়তায় এসব চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ পুলিশের সহায়তা নিয়ে এসব ভণ্ড কবিরাজদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
দীর্ঘদিন ধরে কবিরাজ শহিদুল বাবরী ছাড়াও জেলার প্রত্যন্ত পল্লীতে অসংখ্য কবিরাজ-ফকির নিরীহ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে আসছেন। হাতিয়ে নিচ্ছেন নিরীহ মানুষের টাকা। সেই সঙ্গে রোগী আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে স্থানীয় পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে উদাসিন থাকায় দিনদিন এসব কবিরাজ-ফকিরের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাদুল্যাপুর থানার ওসি ফরহাদ ইমরুল কায়েস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ আমরা এ ধরনের চিকিৎসার কথা শুনেছি। তবে কোনও লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানিয়েছি। তার এ ব্যাপারে সহায়তা চাইলে আমরা পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করবো।’
/এআর/ এপিএইচ/