পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় ১২টিরও বেশি গ্রামের ছয় সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়ক। এতে করে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের সঙ্গে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার যান চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এনামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এখনও পর্যবেক্ষণ করছি। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বন্যা কবলিতদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে আশ্রয় নেওয়া বন্যাকবলিতদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে রোপা আমন, বীজ তলা এবং সবজি খেত পানির নিচে। দুয়েক দিনের মধ্যে পানি নেমে না গেলে এসব জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, শনিবার পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৪৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের বাজার, স্কুল কলেজ, সড়কসহ ১২টিরও বেশি গ্রামের প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরের ভেতর বন্যার পানি প্রবেশ করায় এসব পরিবারের লোকজন মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে প্রশাসনের নিকট চাহিদা পাঠানো হয়েছে বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।
সদরের হলোখানা ইউনিয়নে ধরলা নদীর পানি প্রবেশ করায় এই ইউনিয়নের দশটি গ্রামের প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এসব পরিবারের অনেকেই নিজেদের গবাদী পশুসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তার ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘর-বাড়িতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে পানি প্রবেশ করেছে।
পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের কিছু ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে, পানির নিচে ডুবে আছে অনেক জমির ফসল।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শনিবার সকাল থেকেই বন্যা কবলিত বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শনে বের হয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া প্রতিটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ছাড়াও উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, হাতিয়া ইউনিয়নসহ ভূরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর মানুষ আবারও বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।
রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে জিঞ্জিরাম নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলসহ ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি বসত বাড়িতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
/এনআই/