সুনামগঞ্জে উত্তাল হাওর, গৃহহীন মানুষ

সুনামগঞ্জে উত্তাল হাওরবছরের শুরুতে আগাম বন্যায় নষ্ট হয়েছে মাঠের ফসল। আর এখন হাওরের উত্তাল ঢেউয়ে ভাঙছে বসতভিটে। ফলে গৃহহীন হচ্ছেন সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকার হাজার হাজার মানুষ।

জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য অঞ্জনা তালুকদার বলেন, ‘হাওরের উত্তাল ঢেউয়ে বসতভিটে ভেঙে গেছে। তাই গ্রামের বাড়ি ছেড়ে জামালগঞ্জ শহরে চলে এসেছি।’

বসতভিটের চারদিকে চালিয়া বন দিচ্ছেন এলাকাবাসীহাওরের ঢেউয়ে জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ও ফেনারবাঁক ইউনিয়নের হটামারা, যশমন্তপুর, কৃষ্টপুর, শ্রীমন্তপুর, চাটনীপাড়া, হটামারা হকিয়ার ডুবি, জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের মুসলিমপুর, ঝুনুপুর, ইনসানপুর, লক্ষ্মীপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের বাবুপুর গ্রামের ৬ শতাধিক মানুষের বসতভিটে ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।

সুনামগঞ্জ-৩সাধারণত প্রতিবছর বৈশাখের শেষ দিকে হাওর পাড়ের কৃষকরা ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য বসত ভিটের চারপাশে চালিয়া বন (হাওর এলাকার লতা জাতীয় একপ্রকার বনজ লতা) এবং বাঁশের খুঁটি দিয়ে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করেন। যাতে হাওরের ঢেউ থেকে ভিটেমাটি রক্ষা করা যায়।  এবার আগাম বন্যার কারণে কৃষকরা চালিয়া বন সংগ্রহ করতে পারেননি। তাই বাড়ির চারপাশে বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়ালও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

সুনামগঞ্জ-২হটামারা গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘হাওরের উত্তাল ঢেউয়ে আমার বসত ভিটে মাত্র তিনদিনের ব্যাবধানে ভেঙে গেছে। তাই এখন নয়াহালট গ্রামের সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছি।’

সুনামগঞ্জ-৮পশ্চিম ফেনারবাঁক গ্রামের দিলারা বেগম বলেন, ‘ঘরে ধানচাল কিছুই নেই। তারপর আবার ভাঙনে বসতভিটে হারালাম।’

সুনামগঞ্জ-৬একই গ্রামের রবি আউয়াল বলেন,  ‘যাওনের আর কোনও জায়গা নাই। চারদিকে পানি আর পানি। এখন পানির মধ্যেই থাকতে হবে। বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় কালীবাড়ি নতুনহাটি গ্রামের আশ্রব আলীর বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছি।’

সুনামগঞ্জ-১১বিষ্ণুপুর গ্রামের সন্তুষ, গণেশ ও মঞ্জু জানান, পাকনার হাওরের ঢেউ তাদের বসত ভিটে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন সরকারি উচু জায়গায় ঢেরা তৈরি করে বসবাস করছেন তারা।

সুনামগঞ্জ-৫ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের অজিত কুমার রায় বলেন, ‘জামালগঞ্জের বেহেলী ও ফেনারবাঁক ইউনিয়নের হালির হাওরের তীরবর্তী জনপদ হরিপুর, হাওর আলীপুর  ও ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের বাবুপুর গ্রামের ৩০টি বসতভিটে ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার দুইশতাধিক বসতভিটে ভাঙনের মুখে পড়েছে। সব মিলিয়ে তিনহাজার পরিবারের বসতবাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে।’

সুনামগঞ্জ-৯জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ  মাহমুদ সাজিব বলেন, ‘বছরের শুরুতে আগাম বন্যার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ প্রয়োজনীয় চালিয়া বন না পাওয়ায় প্রতিরক্ষা বাঁধ বানাতে পারেননি।’

সুনামগঞ্জ-৭ফেনারবাঁক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম তালুকদার বলেন, ‘ঢেউয়ের আঘাত থেকে বসত রক্ষা করার এ মুহূর্তে কোনও উপায় আছে বলে মনে হয় না। শুষ্ক মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কিছু একটা করা যাবে।’

/এসএনএইচ/