নওগাঁয় বন্যায় আরও তিন উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা এক লাখ থেকে দুই লাখে পৌঁছেছে। প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) মহাদেবপুর, সান্তাহার ও দামুরহাট উপজেলা প্লাবিত হওয়ায় জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ৯টিই বন্যার কবলে পড়েছে।
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে শুরুতে নওগাঁর সদর, রানীনগর, মান্দা, আত্রাই, বগলগাছি ও পত্নীতলা উপজেলা প্লাবিত হয়। গত কয়েক দিনে রানীনগর, মান্দা ও আত্রাই উপজেলার আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বেড়িবাঁধের ১৫টি স্থান ভেঙেছে। এতে প্রতিদিনই এ তিন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যায় ৯ উপজেলার ২৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় ভেসে গেছে কয়েক হাজার পুকুরের মাছ।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, আত্রাই, ছোট যমুনা ও পূর্নভবা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দুর্গতরা জানান, আত্রাই ও ছোট যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মান্দা, আত্রাই ও সদর উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৪০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধ যাতে না ভাঙে, সেজন্য তারা দিনরাত পাহারা দিচ্ছেন। তাদের দাবি, পাউবো’র কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ শহরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শহরের প্রধান সড়কে এক ফুট পানি জমেছে, এই অবস্থায়ও ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এছাড়া পুরাতন কালেকটরেট ভবন চত্বর, জেলা প্রশাসকের বাসভাবন, পুলিশ সুপারের বাসভবন, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, বিহারী কলোনি, নাপিতপাড়া, উকিলপাড়া, কালীতলা, পার-নওগাঁসহ শহরের বিভিন্ন স্থান ২-৩ ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে।
এদিকে, ঘরবাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা বিশ্ব বাঁধে, স্কুল ও উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, মানবেতর জীবন যাপন করলেও তাদের কাছে এখনও কোনও সরকারি সাহায্য বা ত্রাণ পৌঁছায়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যাদুর্গতদের চিকিৎসার জন্য একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দুর্গতদের মাঝে বিতরণের জন্য জরুরিভিত্তিতে ১৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।
পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে পানি ধেয়ে এসেছে। এতে করে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে ২১৮ সেন্টিমিটার ও ছোট যমুনা নদীর পানি ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ড. মো. আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মজুদ রয়েছে সাড়ে ৭৪ মেট্রিক টন। এছাড়া নগদ টাকা আছে ৫ লাখ। প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ৩৩ মেট্রিক টন চাল এবং ৫২ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
/এমএ/