১৭ বছরেও হয়নি আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যাকাণ্ডের বিচার

alfred soren (1)

নওগাঁর আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যাকাণ্ডের ১৭ বছরেও বিচার সম্পন্ন হয়নি। ২০০০ সালে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে আলফ্রেড সরেনকে হত্যা করা হয়। এখন পর্যন্ত সেই মামলার হয়নি কোনও সুরাহা, মামলার ভবিষ্যত নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

আলফ্রেডের ছোট ভাই মহেশ্বর সরেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সরেন হত্যা মামলার সাক্ষীদের হটিয়ে দিতে ভীমপুর আদিবাসী পল্লীর সাধারণ আদিবাসীদের ওপর ভূমি দস্যুরা হুমকি অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় মামলার বাদি আলফ্রেডের ছোট বোন রেবেকা সরেনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এবং বসতভিটা থেকে চলে না গেলে সামাজিকভাবে ক্ষতিসহ প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে আলফ্রেডের ছোট বোন ২০১৬ সালে কাতারে চলে যায়। এখনও সেখানে অবস্থান করছেন বলে মহেশ্বর সরেন জানান।

তিনি আরও বলেন, আলফ্রেড সরেন হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মাথায় তার মা ঠাকুরানী সরেন ছেলের শোকে মারা যান। আলফ্রেড সরেনের বাবা গায়না সরেন ছেলে হত্যার বিচার না পেয়ে মারা যান ২০০৮ সালে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমিও বিচার দেখে যেতে পাব কিনা জানিনা।  ইতোমধ্যে থানার মাধ্যমে কমিশন পাওয়া ৬৩ বিঘা আমার প্রাপ্য জমির মধ্যে মাত্র ৩০ বিঘা জমি ভোগ করতে পারছি। বাকি জমি বেহাত হয়ে গেছে বলে তিনি জনান। বেহাত কৃত জমি উদ্ধারে সরকারের কাছে সহযোগিতা চান তিনি।

মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মহসীন রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ১৭ বছর আগে মামলাটি আমি শুরু করি। সেই সময় পিপি ছিলেন জয়নাল আবেদীন ( মিন্টু)। আমরা আলফ্রেড সরেন হত্যাকাণ্ড মামলাটি গুরুত্বসহ বিবেচনা করি। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে ১৭ বছরেও বিচার সম্পন্ন হয়নি। হাইকোর্ট মামলাটি স্থগিত করে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন,আদালতে সাক্ষ্য গ্রহন করার সময় আসামিপক্ষ থেকে দায়েরকৃত মামলার ধারা সংশোধন করার জন্য সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পাটি (সিপিবি) নওগাঁর জেলা কমিটির  সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,২০০০ সালের ১৮ আগষ্ট নওহাটা মোড়ে আদিবাসীদের একটি সভা চলছিল। আলফ্রেড সরেন সভায় আদিবাসী নারীদের নিয়ে আসতে ভীমপুরে যায়। সেই সময় প্রকাশ্যে ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে ভূমিদস্যুদের সন্ত্রাসী বাহিনীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আলফ্রেড সরেন নৃশংস ভাবে খুন হন। হত্যাকাণ্ডের পর আদিবাসী পল্লীর ঘর বাড়ী ভাংচূর ও মালামাল লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে। সন্ত্রাসীদের হামলায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ অর্ধ শতাধিক আদিবাসী মারাত্মক আহত হন। এরপর থেকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকির কারনে বসবাসরত আদিবাসী অনেক পরিবার প্রাণভয়ে অন্যত্র  চলে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনায় তার ছোট বোন রেবেকা সরেন বাদি হয়ে হত্যা ও জননিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন।

দীর্ঘ ১৭ বছরেও আলফ্রেড সরেনের বিচার না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র শ্রেণী নিরপেক্ষ নয়। আদিবাসীরা যদি বাঙালি মুসলিম ধনী হতো তাহলে দীর্ঘ সময় বিচারের বিড়ম্বনা হতো না।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আলফ্রেড সরেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং আদিবাসী হওয়ায় আজ ১৭ বছরের বিচার সম্পূর্ণ হয়নি।’

প্রতি বছর  আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যাকাণ্ড স্মরণে ১৮ আগস্ট , আলফ্রেডের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন আদিবাসী নারী-পুরুষরা।

/এমএইচ/