নীলফামারীতে বন্যার পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি

নীলফামারীতে বন্যা (ফাইল ছবি) নীলফামারীতে বন্যার পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি দুর্গতদের। সপ্তাহখানেক আগে পানি নেমে গেলেও এখনও পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ছয় উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ারও অভিযোগ করেছেন অনেকে। তবে জেলার সিভিল সার্জন বলেছেন, তাদের টিম বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত কাজ করছে। এদিকে, জেলার বিভিন্ন দফতরের হিসেব অনুযায়ী এবারের বন্যায় জেলায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, সৈয়দপুরসহ ছয় উপজেলায় ৪১ হাজার ৫৩৫টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ হাজার পরিবার সম্পূর্ণ ও ১০ হাজার ৫৩৫টি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১১ আগস্ট থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হতে শুরু করে। এসময় পানিবন্দি হয়েছিলেন অন্তত দুই লাখ ৮ হাজার ৬৭৫ জন মানুষ। পাঁচদিন পর পানি নামতে শুরু করে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেন। স্থানীয় প্রশাসনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে নামে।   

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বন্যার পানি নেমে গেলেও পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বানভাসি মানুষজন। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ারও অভিযোগ করেছেন অনেকে। তবে নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. রণজিৎ কুমার বর্মণ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলার ছয় উপজেলায় ৬৮টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা রাতদিন স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্যাদুর্গতদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দফতরের কর্মকর্তা গোলাম মো. ইদ্রিস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত নীলফামারী জেলায় ৩৮ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ২৬০ হেক্টর জমির শাকসবজি, মরিচ ১০৮ হেক্টর, কলা ৩৭ হেক্টর, পেঁপে ১৫ হেক্টর, আদা ১৩০ হেক্টর, হলুদ ৭৭ হেক্টর ও ৫ হেক্টর বীজতলা নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ কোটি ২০ হাজার টাকা।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসান ফেরদৌস সরকার বলেন, ‘এবারের বন্যায় ২৪ হাজার ৯৭০টি পুকুর (মোট আয়তন দুই হাজার ২৩০ হেক্টর) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আট কোটি ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘জেলার ৩ উপজেলা ডিমলা, জলঢাকা ও সৈয়দপুরসহ ১৭ ইউনিয়নে গরু ৯ হাজার ৪৬০টি, মহিষ ৩২টি, ছাগল ৩ হাজার ৩৪০, ভেড়া ৮০৬টি, হাঁস ২২ হাজার ৫৪০, মুরগি ৪৯ হাজার ৬৭৪টি আক্রান্ত হয়েছে। তবে এসব পশুপাখির মৃত্যুর খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত আক্রান্ত তিন হাজার ৭৪৬ গরু, ছাগল ও তিন হাজার ৮৬৫টি হাঁস,মুরগিকে টিকা দেওয়া হয়েছে।’ 

অন্যদিকে, প্লাবিত চারণভূমির পরিমাণ ৫৭ একর। বন্যায় পশুপাখির দানাদার খাদ্য বিনষ্ট হয়েছে ১৫ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন, এর মূল্য প্রায় ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, বিনষ্ট খড়ের পরিমাণ ৮৮ মেট্রিক টন, এর মূল্য ২ লাখ ৯৪ হাজার, বিনষ্ট ঘাসের পরিমাণ ৭১ মেট্রিক টন বাজার, মূল্য ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এসব নিয়ে তিন উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির মোট পরিমাণ ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ডিমলায় ৮টি বাঁধ, ১০টি কাঁচা রাস্তা, ৪টি পুল কালভার্ট মেরামতে প্রায় (আনুমানিক) দুই কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে।’ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সৈয়দপুর উপজেলার খড়খড়িয়া নদীর ২ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে শহরে পানি প্রবেশ করেছিল। বর্তমানে বাঁধটি মেরামতের কাজ চলছে।’

জেলা প্রশাসক খালেদ রহীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে ক্ষতির চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করি, অতি শিগগিরই সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।’