বগুড়ায় পুলিশের মারধরে বিএনপি নেতার মৃত্যুর অভিযোগ

হাসপাতালের সামনে পিন্টুর স্বজনদের আহাজারিপুলিশের মারপিটে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য ও বিএনপি নেতা মাসুদুল হক পিন্টুর(৫০) মৃত্যুর হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকালে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে— হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে।
পিন্টুর পরিবারের সদস্যদের দাবি— মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকালে আশেকপুর ইউনিয়নের শাবরুল গ্রামের বাড়ি থেকে পুলিশ পিন্টুকে তুলে নিয়ে যায়। পিন্টুর মেয়ে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী মেহেরুন নেছা অভিযোগ করে বলেন, ‘কৈগাড়ি ফাঁড়ির পুলিশ তার বাবাকে বাথরুম থেকে টেনে বের করেন। এরপর ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মাথা, বুক, ঘাড় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। এরপর টেনেহেঁচড়ে সিএনজি অটো রিকশায় তুলে নিয়ে যান।’

মেহেরুন জানান, তারা কৈগাড়ি ফাঁড়িতে গিয়ে তার বাবাকে পাননি। পরে জানতে পারেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে মারা গেছেন।

পিন্টুর ভাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এমদাদুল হক ঝিন্টু দাবি করে বলেন, ‘পুকুর নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষ মিল্টন, ইনসান, রাজ্জাক, সাগর, তায়েব আলী, ওয়াহেদ, জনি ও শহিদুল তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে শাজাহানপুর থানায় মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এরাই অর্থের বিনিময়ে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে তার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করিয়েছেন।’ তার ভাইয়ের বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী ও শাজাহানপুর থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম দাবি করেছেন, পিন্টু হৃদরোগে মারা গেছেন।

পিন্টুর পরিবারের সদস্যরা জানান, শাবরুল গ্রামের মৃত জাহান আলীর ছেলে আশেকপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এবং ওই ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসুদুল হক পিন্টু।

এলাকাবাসী জানায়, বর্তমানে পিকআপ চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন সাবেক এই পিন্টু। একটি পুকুরের মালিকানা নিয়ে চাচা ইনসান হাজী এবং তার ছেলে মিল্টন ও অন্যদের সঙ্গে পিন্টুর বিরোধ চলছিল। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষরা সম্প্রতি শাজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। পিন্টু এ মামলার প্রধান আসামি।

মঙ্গলবার বিকাল পৌনে তিনটার দিকে কৈগাড়ি ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিসুর রহমান তিন জন ফোর্স নিয়ে পিন্টুর বাড়িতে আসেন। তারা পিন্টুকে বাথরুম থেকে আটক করেন।

কৈগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনপেক্টর আনিসুর রহমান সাবেক ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা পিন্টুকে মারপিটের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে তাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করার পর রানীরহাট এলাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করলে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘পিন্টুকে মারপিট করা হয়নি। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এ খবর পাঠানো পর্যন্ত নিহত পিন্টুর স্বজনরা হাসপাতালের সামনে আহাজারি করছিলেন।

এদিকে, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক আব্দুল হান্নান জানান, কৈগাড়ী ফাঁড়ির পুলিশ পরিচয় দিয়ে চারজন বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে পিন্টুকে ভর্তি করে দিয়ে চলে যান। পরে তাকে কার্ডিওললি বিভাগের সিসিইউতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সিসিইউ বিভাগের চিকিৎসক আশিফুর রহমান জানান, বেলা ৪টা ৩০ মিনিটে তাকে সিসিইউতে আনা হয়। তারপর তার চিকিৎসা চলতে থাকে। বেলা সাড়ে ৫টায় হৃদরোগ জনিত কারণে তিনি মারা যান। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোনও পুলিশকে সেখানে দেখতে পাননি বলে জানান এই চকিৎসক।