স্টেশন মাস্টারের অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল পৌনে তিনটার দিকে ঢাকাগামী চিত্রা ট্রেনে স্ত্রীকে তুলে দিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান উল্লাপাড়ার সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম। এরপর স্টেশনে থাকা লোকজন ও তার সমর্থকরা তাকে ধরাধরি করে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে বসিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরই এক পর্যায়ে সংসদ সদস্যের সমর্থকরা সহকারী স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেনের কক্ষে ঢুকে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। সিগনালের পতাকার লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয় তাকে।
সহকারী স্টেশন মাস্টরকে মারধরের বিষয়টি তানভীর ইমাম অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি উপস্থিত থাকাকালে কোনও ধরনের মারধরের ঘটনা ঘটেনি। বরং স্টেশন মাস্টাররা নিজেরা বাঁচতে সাংবাদিকদের মিথ্যে তথ্য দিয়েছে।’
এদিকে, এসব ঘটনা তদন্তে পাকশী রেল বিভাগ থেকে বিভাগীয় ট্রাফিক অফিসার (ডিটিও) শওকত জামিল মোহসী ও ট্রাফিক কমার্শিয়াল অফিসার (টিসিও) আনোয়ার হোসেনের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী রবিবারের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ, পাকশীর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) অসিম কুমার তালুকদার বুধবার সন্ধায় বলেন, ‘বিষয়টি একবারেই অনাকাঙ্খিত, দুঃখজনক। সংসদ সদস্য চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় আমরা যেমন মর্মাহত, তেমনি তার সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সহকারী স্টেশন মাস্টারকে মারধর করেছে সেটাতে আমরা কষ্ট পেয়েছি।’
অসিম কুমার তালুকদার আরও জানান, উল্লাপাড়া স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রী উঠানামার জন্য মাত্র তিন মিনিট স্টপেজ নির্ধারিত থাকলেও সংসদ সদস্যের কারণে সেদিন সাড়ে চার মিনিট স্টপেজ দেওয়া হয়েছে। আর সংসদ সদস্য হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শুধু স্ত্রীকে তুলে দিয়ে আকস্মিক ট্রেন থেকে নেমে পড়বেন তা হয়তো সহকারী স্টেশন মাস্টার জনতেন না। তাই তিনি ট্রেনের ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন। তারপরেও যেহেতু ট্রেনে ওঠার আগে মূল স্টেশন মাস্টারের কক্ষে তিনি বসে ছিলেন এবং স্টেশন মাস্টার সামছুল আলম তাকে ট্রেনে তুলে দিতে তার সঙ্গে যান, তাই প্রাথমিকভাবে তার কিছুটা দায়িত্ব অবহেলা প্রতিয়মান হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে সহকারী স্টেশন মাস্টার বরাবরই নিরাপরাধ ছিলেন। তাকে অহেতুক মারধর করায় পাকশী রেলওয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। মারধরের ঘটনায় তিনি ভীষণ ভয়ও পেয়েছেন।