নির্জন ধর্মসাগর পাড়ে এখন বাজারের কোলাহল

ধর্মসাগর পাড়ের দোকানপাট

ধর্মসাগর। এটি কোনও সাগর নয়, ধর্মীয় উপাসনালয়ও নয়। কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষের পানির কষ্ট দূর করার জন্য প্রায় ছয়শ’ বছর আগে খনন করা একটি দিঘি এটি। নগরীর ফুসফুস বলা হয়ে থাকে এ দিঘিকে। টলটলে পানি, সুনসান নিরবতা ও নির্জন সৌন্দর্যের স্থান বলে বহুল পরিচিত এ স্থানটিতেও ইদানীং বাজারের কোলাহল শুরু হয়েছে। দিন দিন দোকানপাট বাড়ছে, বাড়ছে হকারদের আনাগোনা। ময়লা-অবর্জনায় দিঘির পানি স্বচ্ছতা হারাতে বসেছে।

কিন্তু স্থানীয়রা জানায়, নাগরিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠা মানুষেরা প্রকৃতির ছোঁয়ায় একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য রোজই এখানে ছুটে আসেন। স্বাস্থ্য সচেতন লোকজন সকালে ও সন্ধ্যায় ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়ে হেঁটে বেড়ান। তাই ধর্মসাগর পাড়কে বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চান না তারা। এ ব্যাপারে জাগ্রত জনতার প্রতিবাদী মঞ্চের সংগঠক নিজাম উদ্দিন রাব্বী বলেন, ‘এখানে এত দোকানের কোনও প্রয়োজন ছিলো না। ধর্মসাগরের পানি স্বচ্ছ দেখতে চাই, এতে কোনও ময়লা দেখতে চাই না।’

ধর্মসাগর পাড়

শিক্ষাবিদ এহতেশাম হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘এখানে যে নিরিবিলি পরিবেশ ছিলো, তা হারিয়ে যাচ্ছে। একটা-দু’টা করে দোকান বসতে বসতে এখান বাজার হয়ে যাচ্ছে। আমরা বুক ভরা সতেজ নিঃশ্বাস নেওয়ার স্থান হিসেবে আগের সেই ধর্মসাগর পাড় ফিরে পেতে চাই।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম বড়ুয়া জানান, ধর্মসাগর পাড়ে কোনও দোকান লিজ দেওয়া হয়নি। মেয়র মহোদয় কিছু দোকানের মৌখিক অনুমোদন দিয়েছেন, কিছু অবৈধভাবে বসেছে। দোকান বেড়ে যাওয়ায় ধর্মসাগর পাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘এগুলোর একটা তালিকা করছি আমরা। মেয়র মহোদয় দেশে ফিরে আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা যায়, ত্রিপুরার মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর খনন করেন। এই অঞ্চলের মানুষের পানির কষ্ট দূর করার জন্য এটি খনন করা হয়। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ধর্মসাগরের আয়তন ২৩ দশমিক ১৮ একর। ধর্মমাণিক্যের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় ধর্মসাগর। কুমিল্লার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ধর্মসাগরের প্রায় পৌনে ছয়শ’ বছরের ইতিহাস।