আমন ক্ষেতে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ, ফসলহানির শঙ্কায় চাষিরা

আমন ক্ষেতে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণে মরে যাওয়া ধান গাছ তুলে ফেলছেন কৃষক

ময়মনসিংহে রোপা আমনের ক্ষেতে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণে মরে যাচ্ছে ধান গাছ। কীটনাশক দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। এমনটাই অভিযোগ চাষিদের। সদর উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধানের ছড়া আসতে শুরু করেছে। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে ধান ঘরে তোলার কথা। এরই মধ্যে ক্ষেতে দেখা দিয়েছে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ। ফলে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। 

এই পোকার আক্রমণের ধরন সম্পর্কে ঘাগড়া গ্রামের চাষি নায়েব আলী বলেন, ‘সাদা ও লম্বা আকারের এক ধরনের পোকা প্রথমে ধানের পাতাকে মুড়িয়ে ফেলে সেখানে বাসা বাধে, তারপর পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। পরে ধান গাছ মরে যায়, ধানের পাতা শুকিয়ে লাল রঙের খড়ে রূপান্তরিত হয়। এই পোকা এক ক্ষেত থেকে দ্রুত আশপাশের ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে।’

নায়েব আলী আরও জানান, চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছেন তিনি। ক্ষেত প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকার মতো। এখন পোকার আক্রমণে জমির সব ধানের গাছ মরে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমন ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়েই চিন্তিত তিনি।

সদর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের তালেব উদ্দিন জানান, এ বছর দেড় একর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছেন তিনি। তার অর্ধেক জমির ধান গাছে পাতা মোড়ানো পোকা আক্রমণ করেছে। বেশ কয়েকবার বাজার থেকে কীটনাশক কিনে ক্ষেতে ছিটিয়েছেন তিনি কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না বলেও দাবি তার।   

পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ থেকে ক্ষেত বাঁচাতে কীটনাশক দিচ্ছেন চাষি

গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী গ্রামের চাষি আব্দুল আওয়াল জানান, পোকার আক্রমণের কারণে ধান ঘরে তুলতে না পারলে চাষিদের এবার না খেয়ে থাকতে হবে।

এদিকে পোকা থেকে আমন ধান রক্ষায় কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন ধান চাষিরা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ। তিনি বলেন, ‘পোকার হাত থেকে ধান রক্ষা করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিমের সদস্যরা  আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।’

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার ২ লাখ ৬০ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। আর ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ ১৩ মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগের দাবি, ১৩ উপজেলায় ৭৭২ হেক্টর জমির আমন ধানে পাতা মোড়ানো পোকায় আক্রমণ করেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ সদরে ১১০ হেক্টর, মুক্তাগাছায় ৬২ হেক্টর, ফুলবাড়িয়ায় ৪৭ হেক্টর, ত্রিশালে ১৪০ হেক্টর, ভালুকায় ১৩৫ হেক্টর, গফরগাঁওয়ে ২৪ হেক্টর, নান্দাইলে ৬৫ হেক্টর, ঈশ্বরগঞ্জে ০৪ হেক্টর, গৌরীপুরে ৩৫ হেক্টর, তারাকান্দায় ৮ হেক্টর, ফুলপুরে ৩৪ হেক্টর, হালুয়াঘাটে ৮০ হেক্টর ও ধোবাউড়া উপজেলায় ২৮ হেক্টর।

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘পোকা আক্রমণের পরও ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে না।’  

 

এ সংক্রান্ত সংবাদ:

ধান গাছে আগাম ছড়া, ফসল হবে কিনা শঙ্কায় কৃষকরা