পরিবারের দাবি ‘ব্লু হোয়েল’, পুলিশ বলছে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’

স্কুলছাত্রের হাতগাজীপুরে পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রের হাতে একটি কাটা দাগ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। ছেলেটি ও তার পরিবার দাবি করেছে সে ‘ব্লু হোয়েল’ গেমে আসক্ত হয়ে হাত কেটে তিমি মাছের ছবি এঁকেছে, তবে পুলিশ বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছে ছেলেটি ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’, তাই উল্টোপাল্টা কথা বলছে।

সোমবার স্কুলে যাওয়ার পর তার হাতে ব্যান্ডেজ দেখে শিক্ষক প্রশ্ন করলে সদুত্তর দিতে না পারায় তারা ছেলেটিকে বাসায় পাঠিয়ে দেন। এরপর এলাকাবাসীর মাধ্যমে বিষয়টি পুলিশ জানতে পেরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।   

সে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার বেড়াইদেরচালা গ্রামের এক কৃষক পরিবারের সন্তান এবং পাশের কেওয়া পশ্চিম খণ্ড (দারগারচালা) গ্রামের গাজীপুর মেরিডিয়ান স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

ছেলেটির মা বলেন, ‘ওকে নিয়ে আমি ভীষণ চিন্তিত। তার মোবাইল সে নিজেই ভেঙে ফেলেছে।  এসব প্রাণঘাতী গেম যেন কোনও ছেলে-মেয়ের হাতে পৌঁছাতে না পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাদের (সাংবাদিকদের) কাছে অনুরোধ করছি।  তাকে পারিবারিকভাবে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।  তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এখন শঙ্কামুক্ত।’

গাজীপুর মেরিডিয়ান স্কুলের শিক্ষক আব্দুল্লাহ-আল মামুন জানান, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্কুলের ম্যাডাম ক্লাস নেওয়ার সময় ছেলেটির বাম হাতে ব্যান্ডেজ দেখতে পায়।  পরে তার কাছ থেকে শুনে তার কাছে গিয়ে ব্যান্ডেজের কারণ জানতে চান।  সে কোনও উত্তর দিতে না পারায় তাকে প্রিন্সিপালের কক্ষে নিয়ে  জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে উল্টাপাল্টা জবাব দেয়।  পরে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

তবে এ প্রতিনিধির কাছে ‘ব্লু হোয়েল’ গেম খেলার দাবি করে বসেছে ওই স্কুলছাত্র। সে জানায়, ‘সম্প্রতি মোবাইলে ‘ব্লু হোয়েল’ গেম খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ি।  ১২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাত ১০টার দিকে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট অন করার সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনে একটা অ্যাপস ভাসতে থাকে। কৌতূহলবশত অ্যাপসটি ওপেন করি। এরপর একটি কল আসলে আমি রিসিভ করি। তারপর আস্তে আস্তে শুরু হয় মজার মজার ধাপ। খেলতে খেলতে আসে চ্যালেঞ্জিং পর্ব।’

তবে গত তিন দিন ধরে সে গেমটি খেলার দাবি করলেও গেমটির কত পর্ব খেলেছে বা কী কী কাজ করেছে এর সুনির্দিষ্ট কোনও জবাব দিতে পারেনি।

এসব জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, ‘আমার তেমন কিছু মনে নেই।  তবে গেমটি খেলতে খেলতে আমার হাতে তিমি মাছের ছবি আঁকতে বলা হয়েছিল।  আমার হাত কেটে কিভাবে ছবি এঁকেছি, আমিও জানি না। রাতে কী করেছি, আমার কিছু মনে পড়ে না।  তবে মাঝে মাঝে হাতের কাটা জায়গায় একটু একটু জ্বালা-যন্ত্রণা করেছে।’

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান রানা জানান,  তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম— সে মানসিক ভারসম্যহীন। সে প্রায় সময়ই উল্টাপাল্টা কথা বলছে। তার মা রহিমা জানিয়েছেন, রাগ উঠলে সে বাড়ির সব কাচের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।