মুন্সীগঞ্জে অধিকাংশ চাল ব্যবসায়ীর লাইসেন্স নেই

চাল (ফাইল ছবি)মাত্র ২০ বস্তা চাল মজুত থাকলেই ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিতে হবে— সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা থাকলেও মুন্সীগঞ্জের অধিকাংশ চাল ব্যবসায়ীরই লাইসেন্স করা নেই। ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, তারা এখনও লাইসেন্স নিতে বাধ্যবাধকতার কথা জানেন না। যদিও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের দাবি, লাইসেন্স নেওয়ার নির্দেশনা জানিয়ে ব্যবসায়ীদের এরই মধ্যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. তাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের জনবল কম হওয়ায় প্রতিদিন একটি-দু’টি বাজার ঘুরে বিজ্ঞপ্তি আকারে নোটিশ দেওয়া হয়।’
জানা গেছে, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে চাল ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিতে বলেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যবসায়ীকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে জানানোর কথা। কিন্তু মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই বলছেন, তারা এ বিষয়ে কোনও নোটিশ পাননি। সোমবার (১৬ অক্টোবর) সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের ‘ফুড লাইসেন্স’ ও ‘ট্রেড লাইসেন্স’ থাকলেও চাল ব্যবসার জন্য আলাদা কোনও লাইসেন্স নেই। অনেক ব্যবসায়ীর ধারণা, যারা চাল কলের মালিক, শুধু তাদেরই লাইসেন্স নিতে হবে।
মুন্সীরহাটের ব্যবসায়ী পাপ্পু সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চালের ব্যবসার জন্য লাইসেন্স নিতে হবে, এমন কোনও নোটিশ পাইনি।’ বিনোদপুরের পাইকারী ব্যবসায়ী হক ট্রেডার্সের মালিক আয়নাল হক বলেন, ‘আমাদের জন্য আর কোনও লাইসেন্স লাগবে না। যারা চাল উৎপাদন করে, অর্থাৎ চাল কলের মালিক, তাদের লাইসেন্স নিতে হবে।’
যদিও নোটিশ পাননি বলে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. আবু বকর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন দুয়েকটি করে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। যারা ৩০ অক্টোবরের মধ্যে লাইসেন্স নেবে না, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ব্যবসার জন্য যার কাছে কমপক্ষে ২০ বস্তা বা এক টন চাল মজুত আছে, তাকেই লাইসেন্স নিতে হবে। তিন ধরনের লাইসেন্স দেওয়া হবে— খুচরা, পাইকারী ও চাল কলের মালিক।’ কোন ধরনের লাইসেন্সের জন্য খরচ কত হবে, তা বলতে পারেননি তিনি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার কমপক্ষে পাঁচশ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স নিতে হবে। যদিও এমন কোনও সংখ্যার কথা বলতে পারেননি জেলা খাদ্য কর্মকর্তা।
এদিকে, গত কয়েক মাসে চালের দাম ব্যাপক হারে বাড়লেও এখনও সেই দাম কমছে না। প্রতি বস্তায় চালের দাম ছয় থেকে সাতশ টাকা বাড়লেও গত কয়েকদিনে চালের দাম কমেছে প্রতি বস্তায় মাত্র এক থেকে দেড়শ টাকা। মুন্সীগঞ্জের বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. নিজামউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন প্রতি বস্তা মিনিকেট ৩,২০০ টাকা থেকে ৩,৩০০ টাকা, নাজিরশাইল ৩,৩০০ টাকা থেকে ৩,৪০০ টাকা, আটাশ ২,৪০০ টাকা ও বাসমতি চাল ২৫ কেজির বস্তা ১,৬০০ টাকা থেকে ১,৮০০ টাকা। চালের দাম যে হারে বেড়েছিল, সে হারে কমছে না। তবে, বাজার দেখে মনে হচ্ছে দাম আর বাড়বে না।’
রাইস মিলের মালিকরা আবার জানালেন, ধানের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন হচ্ছে না রাইস মিলগুলোতে। আলাউদ্দিন অটো রাইস মিলের মালিক কবির হোসেন বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জে অটো রাইস মিল আছে ছয়টি। কিন্তু ধানের দাম বেশি বলে চালের উৎপাদন বন্ধ আছে। এই দামে ধান কিনে চাল বেচে পোষায় না।’
আরও পড়ুন-
বছরের ৯ মাসই পানির নিচে স্কুল মাঠ!
বাংলা ট্রিবিউনে প্রতিবেদনের পর চাল পেলেন ২০০ জেলে
কুয়েতে মা-সন্তানসহ একই পরিবারের পাঁচ বাংলাদেশি নিহত