কুমিল্লায় সৎ ভাইকে হত্যা: ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৫

কুমিল্লায় সৎ ভাইকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যায় অভিযুক্তরা প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য মামলার পাঁয়তারা করছিল। এতে পুলিশের সন্দেহ হলে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে অভিযুক্তরা।

নিহত আমির হোসেন কুমিল্লার মেঘনা থানার চালিভাঙ্গা গ্রামের মো. হানিফের ছেলে। আমির হোসেন ট্রলারচালক ছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৫ অক্টোবর আমির হোসেন নিখোঁজ হন। একইদিনে তার সৎ ভাই দেলোয়ার হোসেন আহত হন। পরদিন ১৬ অক্টোবর নিখোঁজ আমির হোসেনের লাশ মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ নানাভাবে খোঁজখবর নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান লতিফ সরকার ও দেলোয়ার হোসেন গংদের থানায় আসতে বলে। তারা এসে প্রতিপক্ষের লোকদের নামে অভিযোগ জানায়। এ সময় নিহতের সৎ ভাই দেলোয়ারের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, গ্রেফতাররা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা হলো- সৎ ভাই দেলোয়ার হোসেন, চালিভাঙ্গা (ইসলামপুর) গ্রামের নান্নু মিয়ার ছেলে মো. মানিক, ৮ নং চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লতিফ সরকার, মৈশেরচরের আবদুল আওয়ালের ছেলে নরুল আমিন মেম্বার, চালিভাঙ্গা (মৌলভী বাড়ি) আবুল হাসেমের ছেলে মো. সাইদুল ইসলাম।

সম্মেলনে পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন আরও জানান, ১৫ অক্টোবর রাতে চালিভাঙ্গা গ্রামের পাগড়িপাড়া ব্রিজের ওপর দুইপক্ষের সংঘর্ষে দেলোয়ার নামে একজন জখম হয়। চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জন্য যায় দেলোয়ার। সংঘর্ষে আমির হোসেন নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আহত দেলোয়ার হোসেনের অবস্থান ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায় পুলিশ। কিন্তু পুলিশ হাসপাতালে পায়নি তাকে।

পরে গত ১৭ অক্টোবর ভোর ৬টার সময় পাগাড়িপাড়া খালে ভাসমান অবস্থায় নিখোঁজ আমির হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার জানান, জেলা গোয়েন্দা শাখায় দেলোয়ার ও তার সহযোগীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়। দেলোয়ারের দেওয়া তথ্যমতে তাদের সঙ্গে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের সহযোগী মানিককে গ্রেফতার করা হয়। তারা প্রতিপক্ষের কারণে এলাকায় অবস্থান করতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে সে এলাকা ছাড়া। তার গ্রুপের লোকজন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকায় বৈঠক করে দেলোয়ার তার সৎ ভাই আমিরকে হত্যা করে একটি ঘটনা সাজিয়ে প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন গ্রুপের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয়। সে সিদ্ধান্ত মতে ১৫ অক্টোবর দেলোয়ার পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমির হোসেনকে হত্যা করার উদ্দেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডেকে নৌকা নিয়ে সোনারগাঁও যেতে বলে। সেখান থেকে দেলোয়ার হোসেনসহ তার সহযোগীরা নৌকায় উঠে পাগড়িপাড়া খালের মধ্যে নিয়ে আমিরকে হত্যা করে পানিতে ফেলে দেয়। দেলোয়ার হোসেন এবং অন্য আসামি মানিক ইতোমধ্যে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আমলি আদালত নং-৩ এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।