সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নড়াইল-যশোর-মাগুরা হয়ে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৩০৭ কিলোমিটার। এছাড়া নড়াইল-ভাঙ্গা-ফরিদপুর-আরিচা হয়ে ঢাকার দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার। তবে কালনা সেতু নির্মাণ হলে নড়াইল-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে মাত্র ১২৭ কিলোমিটার। মাওয়াঘাটে পদ্মা এবং কালনাঘাটে মধুমতি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পর চালু হবে বেনাপোল-নড়াইল-পদ্মাসেতু-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল ‘আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ’ ব্যবস্থা। ফলে পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র।
সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ নভেম্বর ছিল কালনা সেতু নির্মাণে দরপত্র গ্রহণের শেষদিন। তবে পরে সময় একমাস বাড়ানো হয়। সময়সীমা শেষে খুব শিগগিরই স্বপ্নের এ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। সেতুটি হবে ছয় লেন বিশিষ্ট। যার দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৮ দশমিক ৫ মিটার। এছাড়া নড়াইলের কালনা এবং গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া দুই অংশে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এজন্য ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে যৌথ পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকবার কালনা সেতুর স্থান পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরিদর্শনকালে তিনি জানিয়েছিলেন, কালনা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বেনাপোল স্থলবন্দর-যশোর-নড়াইল-পদ্মাসেতু-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের মাধ্যমে ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ’ স্থাপিত হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক ও খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির কার্যকরী সভাপতি ছাদেক আহম্মেদ খান বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য কালনা সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। সেতুটি নির্মাণ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, যশোর, বেনাপোলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সহজ ও উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার জ্বালানি তেল সাশ্রয় হবে। আশা করছি খুব শিগগিরই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
নড়াইল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জহিরুল হক বলেন, ‘কালনা সেতুটি নির্মাণ হলে ঢাকা থেকে নড়াইলের দূরত্ব হবে ১২৭ কিলোমিটার, বেনাপোল-কালনা-ঢাকার দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১৫৭ কিলোমিটার এবং খুলনা-বসুন্দিয়া-কালনা-ঢাকার দূরত্ব হবে ১৯০ কিলোমিটার।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে ঢাকায় যেতে ৩০০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়।’
কালনা সেতু বাস্তবায়নকারী প্রকল্প ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট বাংলাদেশ’-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন সিংহ বলেন, ‘প্রথমদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরবর্তীতে নকশা পরিবর্তন করা হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে জাইকার সহযোগিতা চাওয়া হয়। এ কারণে সেতু নির্মাণে দেরি হচ্ছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে কাজের সুবিধার্থে দরপত্র গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।’