কালনা সেতু হলে ঢাকা-নড়াইলের দূরত্ব কমবে ১৮০ কিলোমিটার

Narail Kalna Setu Picture-01দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে আছে মধুমতি নদী।অথচ এই নদীর কালনা এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এসব জেলার সঙ্গে রাজধানীর দূরত্ব কমে যাবে প্রায় অর্ধেক। বিশেষ করে ঢাকা-নড়াইলের দূরত্ব কমবে ১৮০ কিলোমিটার।আশার কথা,দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের এই দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কালনা সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। 

সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নড়াইল-যশোর-মাগুরা হয়ে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৩০৭ কিলোমিটার। এছাড়া নড়াইল-ভাঙ্গা-ফরিদপুর-আরিচা হয়ে ঢাকার দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার। তবে কালনা সেতু নির্মাণ হলে নড়াইল-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে মাত্র ১২৭ কিলোমিটার। মাওয়াঘাটে পদ্মা এবং কালনাঘাটে মধুমতি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পর চালু হবে বেনাপোল-নড়াইল-পদ্মাসেতু-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল ‘আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ’ ব্যবস্থা। ফলে পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র।

সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ নভেম্বর ছিল কালনা সেতু নির্মাণে দরপত্র গ্রহণের শেষদিন। তবে পরে সময় একমাস বাড়ানো হয়। সময়সীমা শেষে খুব শিগগিরই স্বপ্নের এ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। সেতুটি হবে ছয় লেন বিশিষ্ট। যার দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৮ দশমিক ৫ মিটার।  এছাড়া নড়াইলের কালনা এবং গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া দুই অংশে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এজন্য ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে যৌথ পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ হবে।

Narail Kalna Setu Picture-02আরও জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি একনেক সভায় ২৪৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর ওপর কালনা ঘাটে চার লেন বিশিষ্ট কালনা সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এক বছর পর ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এর পৌনে তিন বছর পর জাইকার সহায়তায় নতুন নকশায় এবং বৃহৎ বাজেটে ছয় লেন বিশিষ্ট এ সেতু নির্মিত হতে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে কয়েকবার কালনা সেতুর স্থান পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরিদর্শনকালে তিনি জানিয়েছিলেন, কালনা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বেনাপোল স্থলবন্দর-যশোর-নড়াইল-পদ্মাসেতু-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের মাধ্যমে ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ’ স্থাপিত হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক ও খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির কার্যকরী সভাপতি ছাদেক আহম্মেদ খান বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য কালনা সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। সেতুটি নির্মাণ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, যশোর, বেনাপোলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সহজ ও উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার জ্বালানি তেল সাশ্রয় হবে। আশা করছি খুব শিগগিরই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’

Narail Kalna Setu Picture-03নড়াইল জেলা উন্নয়ন সমন্বয় ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ মুনীর হোসেন বলেন, ‘কালনা ফেরী ঘাট দিয়ে খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বরিশাল, মাদারীপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সড়কে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। ফেরিঘাটের দু’পাশে যানজটের কারণে দু’তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফেরি পার হতে হয়। এতে পচনশীল কৃষি পণ্য, মাছ, ফলসহ অন্যান্য পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। আর পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভোগান্তিও অনেক। সেতুটি নির্মাণ হলে এসব ভোগান্তি কমবে।’

নড়াইল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জহিরুল হক বলেন, ‘কালনা সেতুটি নির্মাণ হলে ঢাকা থেকে নড়াইলের দূরত্ব হবে ১২৭ কিলোমিটার, বেনাপোল-কালনা-ঢাকার দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১৫৭ কিলোমিটার এবং খুলনা-বসুন্দিয়া-কালনা-ঢাকার দূরত্ব হবে ১৯০ কিলোমিটার।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে ঢাকায় যেতে ৩০০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়।’

কালনা সেতু বাস্তবায়নকারী প্রকল্প ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট বাংলাদেশ’-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন সিংহ বলেন, ‘প্রথমদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরবর্তীতে নকশা পরিবর্তন করা হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে জাইকার সহযোগিতা চাওয়া হয়। এ কারণে সেতু নির্মাণে দেরি হচ্ছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে কাজের সুবিধার্থে দরপত্র গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে ইয়াবা পাচারকারীরা