তাজরীন ফ্যাশনসের সেই আগুন কেড়ে নেয় ১১৩ তাজা প্রাণ। পরে অসুস্থ হয়ে মারা যান আরও একজন। সেই রাতে মৃত্যুকূপ থেকে কয়েকশ শ্রমিক বেঁচে ফিরলেও তাদের অধিকাংশ গুরুতর আহত হন। কেউ হারান কর্মক্ষমতা, কেউ হন সারা জীবনের জন্য পঙ্গু। আবার কেউ হারিয়েছেন চোখের দৃষ্টি। তবে দুঃসহ স্মৃতি পাড়ি দিয়ে আহত শ্রমিকরা আজ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় নেমেছেন। তবে বাধা যেন পথে পথে। শরীরের অক্ষমতায় চাকরিতে প্রতিবন্ধকতা। কারও কারও কাজের সার্মথ্য থাকলেও তাজরীনের পরিচয় পেলে কোনও প্রতিষ্ঠান চাকরি দিতে চায় না। পরিচয় আড়াল করে চাকরি নিলেও ভয় থাকে সব সময়, কখন কারখানা কর্তৃপক্ষ জেনে যায়! পরিচয় জানার পর বিভিন্ন কৌশলে চাকরিচুত করা হয়েছে তাজরীনের সাবেক অনেক শ্রমিককে। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় থাকা শ্রমিকদের অভিযোগ, তাজরীনের শ্রমিকদের প্রতি কারখানা মালিকদের কোনও আন্তরিকতা নেই।
তাজরীন থেকে বেঁচে ফেরা আহত আরেক শ্রমিক বিলকিস বেগম জানান, দীর্ঘ চিকিৎসার জন্য কোথাও কাজ করতে পারেননি। শরীর এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। তবু বেঁচে থাকার তাড়নায় কাজের জন্য বিভিন্ন কারখানায় গেটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কাজও পেয়েছিলেন। তবে কাজের সার্মথ্য নেই– এই অজুহাত দেখিয়ে চাকরিচ্যুতও করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফটোকপি ও কম্পোজের দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন আশুলিয়ায় তাজরীন থেকে বেঁচে চাওয়া মুন্সীগঞ্জের দম্পতি খোরশেদ আলম রবিন ও ফাতেমা বেগম। রবিন পাঁচ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে বেঁচে গেলে কোমরের হাড় ভেঙে কর্মক্ষতা হারিয়েছেন। আর পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্তা ফাতেমা তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে বেঁচে যান। কিন্তু মাথায় লোহার আঘাতে গুরুতর অসুস্থ হন। তবে সব কিছুর পরও এই দম্পতির পরম পাওয়া তাদের সন্তান– জান্নাতুল বেগম।
এ দম্পতি বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ যা পেয়েছি চিকিৎসার জন্য সব খরচ হয়ে গেছে।’ বাঁচার তাগিদে আশুলিয়ায় তাজরীনের পাশের এলাকায় কম্পোজ ও ফটোকপির দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। তবে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। কখনও ঘরে খাবারও থাকে না। এ দম্পতি বলেন, আমরাও কর্মক্ষম মানুষই ছিলাম। তাই কারো করুনা নয়, পুঁজি বাড়াতে চাই সহজ শর্তে ঋণ বা সকলের সহযোগিতা।
তাজরীনের পরিচয় দিলে চাকরি হয় না বলে শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘তাজরীনের শ্রমিকদের নিয়ে বিভিন্ন কারখানার মালিকের একটা ধারণা, তারা অনেক সচেতন ও শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে জানাশোনা আছে। তারা অন্য শ্রমিকদের মতো কাজ করতে পারবে না বলেও মনে করেন মালিকরা। এজন্য তাজরীনের শ্রমিকদের কাজে নিতে চায় না কেউ। এ ভুল ধারণা থেকে কারখানা মালিকদের বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ কর্মসংস্থানের মাধ্যমেই তাজরীনের আহত শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। যতটুকু সার্মথ্য আছে সে অনুযায়ী কাজ বা পারিশ্রমিক দিতে পারেন।’ তাজরীনের আশপাশে মেডিক্যাল ক্যাম্প করে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এই শ্রমিক নেতা।