ধামরাই সরকারি কলেজ থেকে আসা রিদয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কাসফিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, তারা প্রতিবছরই বিজয় দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন। তবে ত্রিশ লাখ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় কিছু জঙ্গি ও সন্ত্রাসী নস্যাৎ করে দেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ হলেও এখনও অনেক যুদ্ধাপরাধী দেশের বাইরে অবস্থান করছে। অবিলম্বে তাদের বিচার শেষ করে দেশ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার আহ্বান জানান তারা।
একই কথা জানিয়ে মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজের আলভী, মুহিদ ও ফিরোজসহ একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, তারা বিজয়ের গৌরব আর অহংকার নিয়ে প্রতিবছরের এই দিনে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তবে ৩০- লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ বিজয় লাভ করলেও কিছু সন্ত্রাসী ও জঙ্গি দেশকে কলঙ্কিত করছে। তারা অবিলম্বে এসব সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মুল করে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে আসা ধামসো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশকে যখন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ঠিক তখনই কিছু জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে বিশৃঙ্খলা করার পাঁয়তারা করছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের নির্মুল করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
হাতে জাতীয় পতাকা, মাথায় বাংলাদেশের মানচিত্রসহ ফিতা, আবার কারও কারও গায়ে লাল-সবুজ রঙয়ের পোশাক। সবার চোখে মুখে বিজয়ের হাতছানি। ছেলে বুড়ো আর তরুণ-তরুণীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুরাও বাবা-মা ও স্বজনদের সঙ্গে এসেছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। লাখো শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তারা। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় বিউগলে বেজে উঠে করুণ সুর। তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এসময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে কিছু সময় নীরবতা পালন করে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিন বাহিনীর প্রধানরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা
পরে শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শুরু হয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার আনুষ্ঠিকতা।
স্পিকারের শ্রদ্ধা
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর জনসাধারণের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করার আগেই শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ভারতীয় প্রতিনিধি দল, ১৪ দল, বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও সংগঠন।
তিন বাহিনী প্রধানের শ্রদ্ধা
এদিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ভোর রাত থেকেই স্মৃতিসৌধ এলাকাসহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার শ্রদ্ধা
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, সাভার থানা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হাসান আলালসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের আগমন উপলক্ষে শনিবার সকাল ৮টার পর থেকেই নবীনগরে স্মৃতিসৌধ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে ও স্লোগানে স্লোগানে তারা মুখর করে তোলেন স্মৃতিসৌধ এলাকা।