মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ভাস্কর্য তৈরির কাজ চলছে। এ ভাস্কর্যে তিন জন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতির মধ্যে ছিল একজন ছিল নারী। পুরো ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে।কিন্তু শেষ মুহূর্তে একটি মহলের চাপ ও নির্দেশে ওই নারী মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি ভেঙে সেখানে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি স্থাপনের কাজ চলছে।
তাড়াইল উপজেলা পরিষদের সামনে একটি খোলা জায়গায় ২০১৬ সালে ভাস্কর্যটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়।কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ভাস্কর সুষেন আচার্য ও শ্যামল আচার্য ভাস্কর্যটি তৈরি করছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, যেখানে ভাস্কর্যটি তৈরি করা হচ্ছে,তার সামনেই রয়েছে তাড়াইল-সাচাইল দারুল হুদা কাছিমুল উলুম মাদ্রাসা এবং পাশেই আছে একটি মসজিদ। এ দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আপত্তির কারণেই ভাস্কর্যে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
ভাস্কর সুষেন আচার্য বলেন, ‘ভাস্কর্যটিতে তিন জন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে একজন নারীকে রেখে নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছিল। স্থানীয় নেতাকর্মী যারা নির্মাণ কাজ দেখভাল করছিলেন, হঠাৎ করে তারা সিদ্ধান্ত পাল্টান এবং নারীর প্রতিকৃতিটি না দিয়ে সেখানে একজন পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার আকৃতি দিতে বলেন। সে অনুযায়ী এখন কাজটি শেষ করা হয়েছে। এ জন্যই নকশা অনুযায়ী আর কাজটি সম্পন্ন করতে পারিনি।’
তবে ভাস্কর সুষেনের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তাড়াইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া মোতাহার জানান, যেহেতু ভাস্কর্যটি থেকে ১০০ ফুট দূরে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে। এখানে আলেমরাও থাকেন, সেখান থেকে বের হলেই এই নারী ভাস্কর্যটি চোখে পড়বে। তাই নারী ভাস্কর্যটি দক্ষিণ দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। নারী প্রতিকৃতি পাল্টে পুরুষ বানানোর কথা বলা হয়নি।
তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শিবির বিচিত্র বড়–য়া জানান, জেলা পরিষদ ডিজাইন পরিবর্তন করে ভাস্কর্যের কাজ করতে শিল্পীকে কোনও চিঠি বা নির্দেশ দেয়নি।
এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি নারী নেত্রী বিলকিস বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিছু ধর্মান্ধ ব্যক্তির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এখানে নারী ভাস্কর্যটি ভেঙে আবার পুরুষ বানানো হচ্ছে। নারী সমাজের পক্ষ থেকে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নারী-পুরুষ মিলেই এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।স্বাধীনতার এত বছর পরও এমন ঘৃণ্য কার্যক্রম আমরা কখনও প্রত্যাশা করি না।’
জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ভাস্কর্যটি তৈরির কাজ গত জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় আরও ছয় মাস সময় বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।