পিরোজপুরে ৯৫ শতাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দমকল বিভাগের লাইসেন্স নেই

অগ্নি-নির্বাপক সরঞ্জাম (ছবি- অনলাইন থেকে নেওয়া)

পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ৯৫ শতাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নেই। অথচ এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ফায়ার সার্ভিসের অনুমতিপত্র থাকা বাধ্যতামূলক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুর সদর, মঠবাড়িয়া, কাউখালী, স্বরূপকাঠি, নাজিরপুর, ইন্দুরকানী ও ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় স-মিল, কাপড়, পেট্রোল-ডিজেল, ভোজ্যতেল, স্টেশনারি, মুদি-মনিহারি, লাইব্রেরি ও ওষুধের দোকানসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ৮ হাজার। এর মধ্যে দমকল বিভাগের লাইসেন্স আছে মাত্র ৮৩৬টি প্রতিষ্ঠানের।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান চালুর সময় থেকে অধিকাংশ মালিক দমকল বিভাগের লাইসেন্স না করে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকের দাবি, দমকল বিভাগের লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতার ব্যাপারগুলো তারা জানেন না। অথচ দমকল বিভাগ সূত্রের অভিযোগ, লাইসেন্স নেওয়ার ব্যাপারে সময়ে সময়ে মাইকিং করা হলেও তাতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কর্ণপাত করেন না।

পিরোজপুর শহরের বাজার রোডের মুদি দোকানি কবির বলেন, ‘দমকল বিভাগের লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে শিগগিরই লাইসেন্স নেবো।’

স্বরূপকাঠির বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আ. সালাম সিকদার দাবি করেন, ‘স্বরূপকাঠির মিয়ার হাট ও ইন্দের হাটে প্রায় ৩ হাজার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরও দমকল বিভাগের লাইসেন্স নেই।’

পিরোজপুরের অন্যতম বাণিজ্যিক বন্দর মঠবাড়িয়া। মঠবাড়িয়া বণিক সমিতির সভাপতি মো. শামসুল আলম জানান, মঠবাড়িয়া বন্দরে পনেরশ’ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ৬-৭টি প্রতিষ্ঠানের দমকল বিভাগের লাইসেন্স রয়েছে।

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠি বন্দর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুর রহমান সবুজ জানান, শ্রীরামকাঠি বন্দরে ৪শ’ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০-১৫টি প্রতিষ্ঠানে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা সদরের উত্তর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বজলুর রহমান খান জানান, কাউখালী উত্তর বাজার ও দক্ষিণ বাজারে প্রায় তেরশ’ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সব মিলিয়ে ৫০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

পিরোজপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীব বলেন, স-মিল, কাপড়, পেট্রোল-ডিজেল, ভোজ্যতেল, স্টেশনারি, মুদি-মনিহারি, লাইব্রেরি ও ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে দমকল বিভাগের লাইসেন্স গ্রহণ ও অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

দমকল বিভাগের ওয়ার হাউজ ইন্সপেক্টর (বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর) মো. ফিরোজ আহমেদ জানান, স-মিল, পেট্রোল জাতীয় তেল, কাপড়, ওষুধ, লাইব্রেরি ও স্টেশনারি দোকানে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এটা না করলে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করারও বিধান রয়েছে।

তিনি আরও জানান, লাইসেন্স ও অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় ২০১৬ সালে পিরোজপুর শহরের সদর রোডের জুবায়ের এন্টারপ্রাইজের মালিককে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। এছাড়া একইভাবে কাউখালী উপজেলা শহরের কামরুল স্টোরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

মো. ফিরোজ আহমেদ জানান, অনেক সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানেও অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই এর জন্য দায়ী।