হঠাৎ করেই বাঘের আনাগোনা, মোংলায় আতঙ্ক

রয়েল বেঙ্গল টাইগার (ফাইল ছবি) গহীন অরণ্য থেকে ইদানীং লোকালয়ে আসতে শুরু করেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাঘের উৎপাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মোংলার সুন্দরবন সংলগ্ন বৈদ্যমারীসহ আশপাশের এলাকায় মানুষ। সম্প্রতি বন থেকে বেরিয়ে এসে গবাদি পশুর ওপর আক্রমণের ঘটনাও ঘটিয়েছে ক্ষুধার্ত বাঘগুলো। বাঘের তাড়া খেয়ে লোকালয়ে আসতে শুরু করেছে শঙ্কিত হরিণের দল। স্থানীয় লোকজন ও বন বিভাগের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয়দের দাবি, সুন্দরবন ও লোকালয়ের মধ্যবর্তী খরমা নদী শীতে শুকিয়ে যাওয়ায় বাঘের আনাগোনা বেড়ে গেছে।

এলাকাবাসী জানায়, লোকালয়ে বাঘের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীরা। খুব প্রয়োজন না পড়লে কেউ ঘরের বাইরে তেমন একটা বের হচ্ছেন না। ইতোমধ্যে বাঘের আক্রমণে পেটের বাচ্চাসহ একটি গাভি প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়াও বাঘের তাড়া খেয়ে বনের ভেতর থেকে লোকালয়ে চলে আসা একটি হরিণকে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দিয়েছে বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এলাকায় বাঘের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে স্থানীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বৈদ্যমারী এলাকার লোকজন।

ওই বাসিন্দা অলিয়ার রহমান বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আশপাশের এলাকায় বাঘের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্শ্ববর্তী বনের ভেতর থেকে লোকালয়ে এসে প্রায়ই হানা দিচ্ছে বাঘ। শীত মৌসুমে বন ও লোকালয়ের মধ্যবর্তী খড়মা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ক্ষুধার্ত দু’টি বাঘ গ্রামে প্রবেশ করে গরু-মহিষসহ গবাদি পশুর ওপর হামলা চালাচ্ছে। ফলে এতে করে এলাকাবাসী বাঘ আতঙ্কে ভুগছে। 

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) বৈদ্যমারী গ্রামের মমিন উদ্দিন মুন্সীর গোয়ালের একটি গাভি সুন্দরবনে প্রবেশ করলে বাঘ হামলা চালিয়ে গাভিটিকে শিকার করে ও গাভিটির পেছনের অংশ থেকে ১০ থেকে ১২ কেজি মাংস খেয়ে ফেলে। এ সময় ঘটনাস্থলে লোকজন পৌঁছানোর আগেই বাঘটি বনের ভেতরে চলে যায়।

গাভির মালিক মমিন উদ্দিন মুন্সী বলেন, ‘বাঘটি গাভির পেছনের দিক থেকে খেয়ে ফেলেছে। এ কারণে গাভির পেটে থাকা বাচ্চার দু’টির পা বেরিয়ে গিয়েছিল। বাঘের আক্রমণে গাভি ও বাচ্চা উভয়কেই হারাতে হয়েছে।’

এর আগে বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিকালে একই এলাকায় বাঘের তাড়া খেয়ে লোকালয়ে চলে আসে একটি হরিণ। পরে স্থানীদের সহায়তায় হরিণটি উদ্ধার করা হয়।

এ ব্যাপারে বন বিভাগের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে বৈদ্যমারী এলাকায় বাঘের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে বনের আশপাশের লোকজনকে সচেতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

কামরুল হাসান আরো জানান, বাঘের আনাগোনাটা একটা ভালো দিক। কারণ বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিই এর লক্ষণ। সুতরাং বাঘ আমাদের প্রয়োজন আছে। বাঘের এবং সাধারণ মানুষের জানমালের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচেষ্ট রয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি সুন্দরবনের কিছু স্থানকে গো-চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে গাভির মালিকের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বন বিভাগের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান। ভবিষ্যৎতে যাতে কারও গবাদি পশু বনে প্রবেশ না করে সেজন্য সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।