মাঝে মধ্যে কিছু চালান ধরা পড়লেও বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে অনায়াসে পাচার হয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের ফুলকা। তবে ফুলকা রফতানিতে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করা হলে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিধি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজের ফুলকা খুচরা ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারিতে দর উঠছে কেজিতে ৮/১০ টাকা। তবে কিছুদিন আগেও এসব ফুলকা ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। এখন সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।
হিলি বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মমতাজ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারতের হিলিসহ পুরো পশ্চিমবঙ্গে আমাদের দেশীয় পেঁয়াজের ফুলকার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তারা এসব ফুলকা বিভিন্ন তরকারি ছাড়াও আলাদাভাবে ভাজি করে খায়। যা তাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এছাড়াও তারা যে পেঁয়াজ আবাদ করে সেগুলোয় এমন ফুলকা হয় না। শুধুমাত্র আমাদের দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ফুলকাই এমন হয়।’ তিনি জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে যেসব ট্রাক ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসে, সেসব ট্রাকের ড্রাইভাররাও এ দেশের বাজার থেকে ফুলকা কিনে নিয়ে যান।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. হারুন উর রশীদ হারুন ও আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন বিনা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বাংলাদেশের পেঁয়াজের ফুলকার ভারতে বেশ চাহিদা রয়েছে। ভারতের বাজারে এর দামও বেশ ভালো। দেশের বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম হলেও ভারতের বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে এসব ফুলকা বিক্রি হয়। তারা বলেন, পেঁয়াজের ফুলকা ভারতে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের মতো ভারতে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র না থাকায় এসব পণ্য যথাযথভাবে রফতানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এ কারণে এটি অবৈধপথে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু পেঁয়াজের ফুলকা নয়, এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে আলু, কলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ হয়। দেশে অনেক সময় এসব পণ্যের দাম খুব কম থাকে। সেসময় ভারতের বাজারে দাম ও চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু তাদের সীমান্তের ভেতরে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র না থাকার কারণে এসব পণ্য ভারতে রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে সরকার যেমন রাজস্ব আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার এসব বিষয় নিয়ে যদি ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে, ভারত হিলিতে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র স্থাপন করে তাহলে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এসব পণ্য রফতানি করা সম্ভব হবে। এতে এসব পণ্যের পাচার যেমন কমে আসবে তেমনি সরকারের রাজস্ব আহরণ আরও বাড়বে।
বিজিবি হিলির মোংলা বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো. মহসিন আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সীমান্তের সব ধরনের অপরাধ দমনে বিজিবি সর্বদা সর্তক অবস্থায় রয়েছে। আগে সীমান্ত দিয়ে পেঁয়াজের ফুলকা ভারতে তেমন পাচার না হলেও সম্প্রতি সীমান্ত দিয়ে পাচারের বিষয়টি নজরে এসেছে। আমরা গত ১৫ দিনের মধ্যে তিনটি অভিযান চালিয়ে ৬৩টি বস্তায় দুই হাজার ৯৭০ কেজি পেঁয়াজের ফুলকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তে চোরাচালানসহ সব ধরনের অপরাধ দমনে বিজিবি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।