তনু হত্যা

২২ মাসেও মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই

তনু হত্যাকাণ্ড

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকাণ্ডের ২২ মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ ২০ জানুয়ারি। ইতোমধ্যে এ মামলা থানা পুলিশ থেকে ডিবি হয়ে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু ২২ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত মামলার তদন্তই শেষ হয়নি। দীর্ঘ সময়েও খুনি চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার ও কুমিল্লার বিশিষ্টজনরা। তারা সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন আবারও।

তনুর পরিবারের সূত্র জানায়, গত বছরের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর ফেরেননি কলেজছাত্রী তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পান। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তেও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা–এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিন জনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।

এদিকে, ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, চাচাতো বোন লাইজু ও চাচাতো ভাই মিনহাজকে সিআইডির ঢাকা কার্যালয়ে দিনভর পুরানো বিষয়গুলো জিজ্ঞেস করেন ঢাকা সিআইডির কর্মকর্তারা।

গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান জানান, ‘দীর্ঘদিন তনু হত্যার মামলাটি সিআইডিতে পড়ে আছে; কোনও অগ্রগতিই নেই। সিআইডিও গা-ছাড়া ভাব নিয়ে তদন্ত করে যাচ্ছে।’ মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ করে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারী কে, বেরিয়ে আসবে। সিআইডি একে ওকে জিজ্ঞাসার নামে শুধু শুধু সময় ক্ষেপণ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর নিখোঁজ হয় তনু। এরপর জঙ্গলে তার লাশ পাওয়া যায়।’ তনুর হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘তনু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে সিআইডি কাজ করছে। সন্দেহভাজনদের পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি, অল্প সময়ে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারবো।’